ঢাকা, সোমবার, ১৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৩ মার্চ ২০২৫, ০২ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় লোভনীয় ইফতার বিক্রিতে ব্যস্ত দোকানিরা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৫
বগুড়ায় লোভনীয় ইফতার বিক্রিতে ব্যস্ত দোকানিরা

বগুড়া: বগুড়ায় রমজানের প্রথম দিন সুস্বাদু লোভনীয় ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা৷ প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে।

রোববার (০২ মার্চ) বিকেলে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা, ইয়াকুবিয়ার মোড়, জলেশ্বরীতলা, কাঁঠালতলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা মেলে এবারের রমজানে তৈরি ইফতার সামগ্রীর।

বগুড়ায় ইফতার আইটেমে থাকে মোরগ পোলাও, বর বাপের পোলাও, মুরগি, খাসির রোস্ট, কিমা, খাসির রান, কোয়েল, কবুতর ভুনা, বেগুনি, শাহী জিলাপি, শরবত, সুতি কাবাব, টিকা কাবাব, জালি কাবাব, খাসি ও গরুর মাংসের চাপ, চিকেন ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, ভিজা সমুচা, খাসির লেগ কাবাব, আলুর চপ, শাকপুলি, মাঠা, স্পেশাল ফালুদা, লাবাং।

রমজানের প্রথম দিন মানুষ পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পছন্দ করেন। আর ইফতারে দেশের প্রতিটি জেলায়ই আছে কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার।  

রোজার প্রথম দিনের ইফতারের জন্য শহরের বিভিন্ন ইফতার সামগ্রীর দোকান-রেস্টুরেন্টে ক্রেতারা ভিড় করেছেন। দুপুর থেকেই অধিকাংশ দোকান ইফতার সামগ্রী সাজিয়ে রেখেছে।

সুস্বাদু লোভনীয় এসব খাবার কিন্তু আবার সব সময় মেলে না। ইচ্ছে থাকলেও একসঙ্গে এতসব আইটেম মেলানো সম্ভব হয় না। কিন্তু রমজান মাস এলেই চিত্রটা পাল্টে যায়। সাধারণত প্রতি রমজান মাস ঘিরে ইফতার আইটেম হিসেবে এসব খাবার তৈরি করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।  

ইফতারের জন্য শহরের আকবরিয়া গ্র্যান্ড, শ্যামলী, কোয়ালিটি, সেলিম, ময়নাসহ আরও কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁ সুনাম কুড়িয়েছে।

এ ব্যবসায় জড়িতরা জানান, বগুড়াকে নানা কারণে ঐতিহ্যের শহর বলা হয়। এ শহরে তৈরি দইয়ের খ্যাতি শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও রয়েছে। এছাড়া নানা ইতিহাস-ঐতিহ্যের কারণেও মানুষ বগুড়াকে চেনে। এসব বিবেচনায় রেখে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাহারি আইটেমের ইফতার সামগ্রী তৈরি করেন। ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে নানা শ্রেণি-পেশার ক্রেতাদের রুচি ও ক্রয় ক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রাখেন।

সংশ্লিষ্টরা ইফতার সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করতে সকাল থেকেই প্রস্তুতি নেন। নামিদামি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ছোট-বড় হোটেল, ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি দোকানিরা ইফতার সামগ্রী বানিয়েছেন। এজন্য ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি দোকানিদের জায়গা ঠিক করা ও দোকানপাট গুছিয়ে নেওয়ার কাজটা আগেই সেরেছেন তারা।

টুনু মোল্লা, সাজ্জাদ হোসেন, মিল্লাত আহমেদ নামে একাধিক দোকানি বাংলানিউজকে জানান, বগুড়ায় কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের মান ধরে রাখতে ক্রেতার চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে ইফতার সামগ্রী তৈরি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের দিকে দৃষ্টি বাড়াতে পুরো রমজানজুড়েই ভিন্ন ডেকোরেশনের করা হয়। ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি দোকানিরা তাদের সাধ্যমতো ইফতার সামগ্রী বানানো ও দোকান সাজানোর কাজ করে থাকেন।

দোকানিরা বলেন, স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইফতার করতে চাইলে বরাবরই রোজাদার ব্যক্তিদের কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে আসতে হবে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানগুলোয় নির্ধারিত আসন থাকে। সেই হিসেবে প্লেটে রকমারি আইটেমের ইফতার সাজিয়ে টেবিলের আসন অনুযায়ী রাখা হয়। আর আসন ভরে গেলে তখন কোনো কিছু করার থাকে না। দূরদূরান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নামিদামি ব্যানারের প্রতিষ্ঠানে ইফতার করতে আসেন।

স্বনামধন্য এক প্রতিষ্ঠানের কারিগর ইমতিয়াজ বাংলানিউজকে জানান, মানসম্মত ইফতারি তৈরি করার কারণে এখানে প্রতিদিনই ইফতারি নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগে। তাদের হোটেলে জিলাপি, ছোলা, বুনদিয়া, হালিম বিক্রি করা হতো। এছাড়া রোলের ব্যাপক চাহিদা তাদের হোটেলে।

অন্যদিকে ছোট-বড় হোটেল, ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি দোকানিরা দুপুর থেকেই তাদের দোকান ইফতার সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব দোকানে বেচাবিক্রির চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দোকানিদের যেন দম ফেলার ফুরসত থাকে না তখন।

ক্রেতা সাদেক সালমান, সাজিদ আয়মান নামে দুই ভাই বাংলানিউজকে জানান, রমজানে প্রতিদিন তারা শহরের কোনো না কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতার কেনেন। শহরের দোকানগুলোতে প্রতিদিন পাওয়া যায় বাহারি ইফতার সামগ্রী। খেজুর, ফ্রুট স্কিউয়ার, চিকপি সালাদ, ফুলকপি ভাজা, মরিচ ভাজা, বাটন মাশরুম, ভেজিটেবল পাকোড়া, ফিশ চিকেন স্কিউয়ার ইত্যাদি।

নাঈম হাসান, পান্না মিয়া, শাওনা এনাম নামে একাধিক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যেক বছর রমজানে ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়েই চলেছে। পেঁয়াজু, ছোলা, খেজুর, বাদাম, জিলাপি, রস বুনদিয়া, বেগুনি, চানাচুর, ঝুরি চানাচুরসহ নানা আইটেমের ইফতার সামগ্রীর দাম গতবারের চেয়ে এবার বাড়ানো হয়েছে।

তবে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী বা দোকানিরা ক্রেতাদের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের ভাষ্য, ইফতার সামগ্রী তৈরি করার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদেরও দাম বাড়াতে হয়। এতে বেশি পুঁজি খাটাতে হলেও লাভ বেশি হয় না। রমজানের নিয়মিত ইফতার সামগ্রী ব্যবসা তাদের৷ অল্প লাভে তারা ইফতার সামগ্রী বিক্রি করেন দাবি ব্যবসায়ীদের৷

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৫
কেইউএ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।