রংপুর: রংপুর নগরীর নবাবগঞ্জ বাজারের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকায় দুই শিক্ষার্থীকে ব্যবসায়ীর মারধরের ঘটনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের তুলে দিনে লাঠিচার্জ করে সেনাবাহিনী।
এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন এবং একজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার (৮ মার্চ) রাত ১০টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ট্রিপল-ই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম ও সৌরভ সরকার নগরীর নবাবগঞ্জ বাজারের সামনে কেনাকাটা করতে যান। এসময় তারা ফুটপাতে দাঁড়ালে দোকানিরা তাদের সরিয়ে দেন। তারা পাশের সিটি পোশাক ঘরের সামনে দাঁড়ালে মালিক ওসমান গণি তাদেরকে ফুটপাত থেকে সরতে বললে এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই দোকানের কর্মচারী তাদের বেধড়ক মারধর করেন।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সেখানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সিটি পোশাক ঘরের মালিক ওসমান গণিকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। তারা শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করলে পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নেয়। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সড়কে সেখানেই বসে পড়েন। খবর শুনে সেখানে আসেন চেম্বারসহ ব্যবসায়ী নেতারা। পরে সেনাবাহিনী ও ব্যবসায়ী নেতারা এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়। এ ঘটনায় ১ জনকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে শিক্ষার্থীদের বাসে করে নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ফুটপাত থেকে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার দাবি জানান।
এদিকে এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। দুইজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতেই হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যান ভিসি ড. শওকাত আলী।
দোকান কর্মচারীর মারধরে আহত দুই শিক্ষার্থী শরীফ ও সৌরভ জানান, নবাবগঞ্জ বাজারের পুরো ফুটপাত ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছেন। পোশাক দেখতে হলে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়। আমরা এক দোকানে কেনাকাটার জন্য দরদাম করে সেখানে দাঁড়ালে তারা সরে যেতে বলেন। আমরা সেখান থেকে সরে সিটি পোশাক ঘরের সামনের ফুটপাতে দাঁড়াই। এ সময় ওই দোকানের মালিক আমাদেরকে সেখানে থেকে সরতে বলেন। আমরা সরে সামনে দাঁড়ালে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আমাদের বেধড়ক মারতে থাকেন। আমরা এর প্রতিবাদ করে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পরিচয় দিই। তখন তিনি আরও তেড়ে আসেন এবং খারাপ ভাষায় গালি দেন এবং আরও মারধর করতে থাকেন। বিষয়টি আমরা তখন আমাদের বন্ধুদের জানাই। এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থী শরীফের আঙুল ভেঙে গেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, খবর পেয়ে এসে রাস্তা অবরোধ করার পরপরই পুলিশ আসে। পুলিশ দোকানদারকে আটক করে এবং দোকান সিলগালা করার নির্দেশ দিলে আমরা অবরোধ তুলে নিই। এর এক মিনিটের মধ্যেই সেনাবাহিনী এসে কারো কাছে কিছু না শুনেই বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে আমাদের ১০/১৫ জন ছাত্র ভাই আহত হয়। আমরা রাস্তায় বসে যাই। তখন সেনাবাহিনী দুঃখ প্রকাশ করলে আমরা অবরোধ তুলে নিই।
তিনি বলেন, ফুটপাত পরিষ্কার করতে হবে। ফুটপাতে দোকানিরা ব্যবসা করবে, কেউ সেখান দিয়ে হাঁটতে পারবে না আর হাঁটলে আঘাত করবে এটা ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা মানবো না।
রংপুর চেম্বার প্রেসিডেন্ট ও নবাবগঞ্জ বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী জানান, ঘটনা শুনে এসে দেখি সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করছে। তখন আমরা ব্যবসায়ী নেতারা তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হই। পরে তারা ভুল বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চান। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তারা চলে গেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, এ ঘটনায় ওসমান গণি নামের এক ব্যবসায়ীকে আমরা আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। পরিস্থিতি শান্ত আছে।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. ইলিয়াস প্রামাণিক জানান, সেনাবাহিনীর লাঠিচার্জে আমাদের ১০ শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের মারধরে ২ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় মামলা করবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ভিসি নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৫
এসএএইচ