ঢাকা: হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগান্ডা মেশিনে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম সস্তা প্রপাগান্ডা প্রচার করে বেড়ালেও কোনো কোনোটা বেশ কৌশলী।
ভারতের অন্যতম পুরনো এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী বলে পরিচিত এনডিটিভি বছরকয়েক আগে নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন গৌতম আদানির এএমজি মিডিয়া নেটওয়ার্ক কিনে নিয়েছে। তারপর থেকে গণমাধ্যমটিতে মোদীর সরকার, বিজেপি, আরএসএসের প্রতি দুর্বলতা স্পষ্ট। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশে কিছু সহিংসতা হয়েছে, যার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ কেউও আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে এসব ঘটনাকে ফুলে-ফাঁপিয়ে প্রচার করা হয়। এনডিটিভিও একই প্রচারণায় যুক্ত ছিল।
এই প্রচারণায় সর্বশেষ যুক্তহলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা (এনআই) প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের সাক্ষাৎকার। ওই সাক্ষাৎকারের ধরন দেখেই বোঝা যায় কিছু ক্ষেত্রে অনুকূল উত্তর পাওয়ার কৌশলে প্রশ্ন করা হয়েছে তুলসীকে।
তুলসী সনাতন ধর্মাবলম্বী। প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভগবৎ গীতার ওপর শপথ নেন তিনি। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী। স্বভাবতই হিন্দুদের প্রতি তার এক ধরনের ভাবাবেগ কাজ করবে আর তার সেই ধর্মীয় আবেগকেই যেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইলো এনডিটিভি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশে কিছু সহিংসতা হয়েছে, যার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ কেউও আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে এসব ঘটনাকে ফুলে-ফাঁপিয়ে প্রচার করা হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় তুলসী গ্যাবার্ডের সামনে এনডিটিভি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের প্রসঙ্গ তোলে। তখন তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদকে’ পরাজিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা এতে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে।
মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি দুর্ভাগ্যজনক নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়ন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়।
তুলসীর এই মন্তব্য প্রমাণ করে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির যে পাঠ নিচ্ছেন তা ভারতীয় প্রপাগান্ডা নির্ভর এবং সত্যের অপলাপ।
অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশে দেড় সহস্রাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও তা এড়িয়ে যাওয়া ভারতীয় গণমাধ্যম ৫ আগস্টের পরের প্রত্যেকটি ঘটনাকে প্রচার করছে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে।
এনডিটিকে দেয়া তুলসী গ্যাবার্ডের ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
সরকার বিবৃতিতে বলেছে, আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ্য করেছি। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘নিপীড়ন ও হত্যা’ করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা। ’
তুলসী গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, ‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। ’
গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি বলে বাংলাদেশ সরকার ওই বিবৃতিতে দাবি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে পুরো বাংলাদেশকে অন্যায় ও অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৫
এমএম