ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ চৈত্র ১৪৩১, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদে সুন্দরবনে বাড়তি সতর্কতা, বনকর্মীদের ছুটি বাতিল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৫
ঈদে সুন্দরবনে বাড়তি সতর্কতা, বনকর্মীদের ছুটি বাতিল

সাতক্ষীরা: ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে বন বিভাগ। একই সঙ্গে সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিত বনকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

এ ছাড়া জোরদার করা হয়েছে টহল।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ঈদের সময় চোরা শিকারিরা সুন্দরবনে প্রবেশ করে হরিণসহ বন্য প্রাণী শিকারে মেতে ওঠে। অপরদিকে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজী ও শাপলার বিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন বন বিভাগ। তাই হরিণ শিকার ও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সুন্দরবনে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সীমিত করা হয়েছে সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিত বনকর্মীদের ঈদের ছুটি। এ ছাড়া সবাইকে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. মসিউর রহমান জানান, সুন্দরবনে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। হরিণ ও বন্যপ্রাণী শিকার এবং অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সীমিত করা হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ছুটি দেওয়া হবে না।

তিনি জানান, ঈদের বিশেষ এ সময়টাতে শিকারিদের অপতৎপরতা বন্ধ এবং অগ্নি সন্ত্রাসীদের নাশকতারোধে রেঞ্জের সব স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ টহল কার্যক্রম পরিচালনারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে না গিয়ে পরিবার-পরিজন ছেড়ে সুন্দরবনে কাজ করছেন বনরক্ষীরা।

বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান জানান, সুন্দরবনের চাকরিতে প্রায় ঈদেই ছুটি মেলে না। বিশেষ করে রোজার ঈদে তারা বাড়িতে যেতে পারেন না। পরিবার ছাড়া ঈদ করা খুবই কষ্টের। তবে মানিয়ে নিতে হয়। এক সময় খারাপ লাগত। এখন আর খারাপ লাগে না।

এ বন কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু শুধু বন বিভাগ সব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। দুর্গম ও ভয়ংকর বনাঞ্চলে বনপ্রহরীদের সব সময় জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করতে হয়। বেতন ছাড়া অন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তিনি বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশন ও ঝুঁকি ভাতা প্রদানের দাবি জানান সরকারের কাছে।

সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকা নটাবেঁকি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, আমি সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০১৮ সাল থেকে আছি। এর মধ্যে একবার মাত্র পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পেরেছি। গত বছর ঈদের সময় সুন্দরবনের এখানেই কর্মরত ছিলাম। গহীন বনের এই এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও পাওয়া যায় না। ঈদের দিন আমরা আটজন স্টাফ মিলে একটা ব্রয়লার মুরগি আর একটু সেমাই রান্না করে ঈদ পালন করেছিলাম। এবারও তাই করবো।

সুন্দরবনের চুনকুঁড়ি টহল ফাঁড়িতে কর্মরত বনকর্মী সজল মজুমদার বলেন, ঈদে পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে সবাই যখন আনন্দ উপভোগ করবে, ঠিক এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আমরা (বনকর্মীরা) অবস্থান করবো নির্জন সুন্দরবনে। আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় কয়েকজনকে ঈদের নামাজ পড়তে লোকালয়ে পাঠিয়ে দিয়ে আমি বনে টহল করবো। নামাজ শেষ হলে অন্যরাও টহলে যোগ দেবে। এ যে সবাই মিলেমিশে কাজ করছি, এর মাধ্যমেই গড়ে ওঠে সম্প্রীতির বন্ধন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৫
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।