ঢাকা, সোমবার, ২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাগেরহাটে বাণিজ্যিক ভবনে আগুন, নারীর মৃত্যু, আহত ৪৪

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৫
বাগেরহাটে বাণিজ্যিক ভবনে আগুন, নারীর মৃত্যু, আহত ৪৪ আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবন ও পণ্যসামগ্রী

বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় একটি পাঁচ তলা বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে অনিতা রায় (৪০) নামে এক গৃহপরিচারিকার মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৪৪ জন।

 

সোমবার (০৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা সদরের মাইশা টাওয়ারে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে ব্যবসায়ী ও ভবনের বাসিন্দাদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন।

খবর পেয়ে চিতলমারী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। একে একে বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ও খুলনার আটটি ইউনিট অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। এর সঙ্গে যোগ দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয় তারা। তবে এ সময়ের মধ্যে ভবনের নিচে থাকা এমআরএম ফ্যাশনসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ভবনের তৃতীয় তলায় থাকা সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকের রোগীসহ অন্তত ৪৪ জন আহত হয়। ভবন থেকে আহতসহ প্রায় ৮০জনকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকা ব্যাংকের শাখাগুলোর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

সোনালী ব্যাংক চিতলমারী শাখার ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগুনে ভবনের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, ব্যাংকের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে ব্যাংক কার্যালয় এখনও আমরা বুঝে নেইনি। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ব্যাংকের শাখাগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।

নিহত অনিতা রায় চিতলমারী উপজেলার শিবপুর-কাটাখালী এলাকার দেবদাসের স্ত্রী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই ভবনের সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকের মালিক ডা. তাপসের গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন।

এমআরএম ফ্যাশনের মালিকের দুলাভাই শামীম শেখ বলেন, উপজেলার সব থেকে বড় পোশাক ও জুতার শো-রুম ছিল এটি। এখানে আমাদের প্রায় ২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল। এই শো-রুমের আয় থেকে আমাদের কয়েকটি পরিবার চলত। আগুনে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।

এই ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে আরএফএলের শো রুম, প্রথম তলায় এমআরএম ফ্যাশন হাউসসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দ্বিতীয় তলায় সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়াসহ চারটি ব্যাংকের শাখা, একটি বিমা কোম্পানির অফিস, তয় তলায় সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিক, ৪র্থ ও ৫ম তলায় ছিল বাসা বাড়ি। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রবাসী মো. আনিসুর রহমান থাকেন ব্রুনাইয়ে।

আনিসুর রহমানের বোন রুমানা আক্তার বলেন, এই ভবনই আমাদের একমাত্র সম্বল। আমাদের সব স্বপ্ন ছিল এই ভবন ঘিরে। ফ্যাশন হাউস পুড়ল, অনেকে আহত হয়েছেন। ভাইয়া আগুনের খবরে বিদেশে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এমন বিপদে যেন কেউ না পড়ে।  
এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এদিকে আগুনে আহতদের মধ্যে ৪৪জন চিকিৎসা নিয়েছেন চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মুক্তি বিশ্বাস।

তিনি বলেন, আমরা এখানে ৪৪ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। এর মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৪০ জন আমাদের এখানে ভর্তি রয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্থানীয় সবুর মিয়া বলেন, আগুনের খবর পেয়ে আমরা সবাই ছুটে যাই। ক্লিনিকে ভর্তি রোগীদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। অনেককে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়েছি, আবার রং করার জন্য একটি সিঁড়ি ছিল, সেটি দিয়েও অনেককে নামিয়েছি। কয়েকজনকে নামানোর পরে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। এখন হাসপাতালে আছি।

এদিকে আগুন নেভানোর সুবিধার্থে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভবনের সামনের চিতলমারী প্রধান সড়কটি বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া আগুনের খবরে উপজেলা সদরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পৌনে ৫টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করে পল্লী বিদ্যুৎ।

চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শাহদাৎ হোসেন জানান, চারতলার সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এক নারী মারা গেছেন। তার মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। তারা জেলা প্রশাসকের কাছে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তরের আবেদন করেছেন। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে অনুযায়ী, আমরা ব্যবস্থা নেব।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবু বক্কর জামান জানান, আগুন নেভাতে খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জের আটটি ইউনিট চার ঘণ্টা পানি ছিটিয়ে দুপুরের দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। ভবনের নিচতলার একটি পোশাকের দোকানের শট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

বাগেরহাট সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মো. রায়হান বলেন, আগুনে ভবনে থাকা ক্লিনিকে ভর্তি রোগী এবং আবাসিকে কিছু মানুষ আটকে পড়ে। সেনা সদস্যরা তাদের নিরাপদে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৮০জনকে আমরা নিরাপদে সরিয়ে এনেছি। এর মধ্যে যারা রোগী ছিলেন তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।