ঢাকা, রবিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মার্চ ফর গাজা: সারাদিনে যা হলো

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
মার্চ ফর গাজা: সারাদিনে যা হলো ছবি: বাংলানিউজ

আজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে লাখো মানুষের স্লোগানে ঢাকা যেন পরিণত হয়েছে মিছিলের শহরে।

মার্চ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সম্মতিক্রমে তৈরি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ঘোষণাপত্রে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিচার, গণহত্যা বন্ধে কার্যক্রর পদক্ষেপ, ইসরায়েলি পণ্য বয়কট এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহবান জানানো হয়।

ঘোষণাপত্রে যা রয়েছে

ঘোষণাপত্রের প্রথম অংশে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি, দ্বিতীয় অংশে মুসলিম বিশ্বের সরকার ও উম্মাহের প্রতি এবং তৃতীয় অংশে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি পৃথক দাবি জানানো হয়।

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদ্দেশ্য করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদারকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইসরাইলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সেহেতু—আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বলছি-

১. জায়নবাদী ইজরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে।
২. যুদ্ধবিরতি নয়— গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে।
৪. পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।  
৫. ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় দফায় মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দের প্রতি বলা হয়, যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়-এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ; এবং-গাজা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়-এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি; এবং-ভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে; এবং-ভারতে সম্প্রতি ওয়াকফ সম্পত্তি আইনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক অধিকার হরণ করা হয়েছে-যা উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা।

এতে তারা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসিসহ মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর নিকট দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানান—

১. ইজরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সকল সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে; 
২. জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে;
৩. গাযার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে; 
৪. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইজরায়েলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে;
৫. জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।

তৃতীয় অংশে আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ছয়টি দাবি জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়- 

১. বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে; 
২. সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে; 
৩. রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; 
৪. সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে;
৫. জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে।  
৬. পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ঘোষণাপত্র পাঠকালে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, সর্বশেষ দাবিগুলো নিজেদের প্রতি, যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা। আজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তাহলে কাল আমাদের সন্তানেরা হয়তো এমন এক বাংলাদেশ পাবে-যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদী একত্রে নতুন গাজা তৈরি করবে।

নিজেদের প্রতি জানানো দাবিগুলো হলো- 

১. আমরা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো-প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইজরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে;
২. আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করবো-যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সকল প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে।  
৩. আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবো-যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে; 
৪. আমরা বিভাজিত হবো না-কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়।

মঞ্চে যা হলো

বিকেল সাড়ে তিনটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের উদ্যোগে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেক। শুরুতে পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত করা হয়। তেলাওয়াত করেন ক্বারি আহমেদ বিন ইউসূফ আল আজহারী। এরপর প্যালেস্টাইন ও গাজা নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

পরে সেখানে স্লোগান তোলেন ইসলামিক আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারী। এসময় তিনি ‘আমার ভাই শহীদ কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘গাজায় গণহত্যা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টইন, ফ্রি ফ্রি আল আকসা’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর জেনোসাইড নো মোর’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

তিনি বলেন, আজকের মহাজনসমুদ্র ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ভৌগলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি কিন্তু আজকের জনসমাবেশ প্রমাণ করে বাংলাদেশের একেকজনের মনের ভেতরে বাস করে ফিলিস্তিন। আমাদের হৃদয়ে বাস করে গাজা।

আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও ইসলামিক আলোচক  শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব দল মত চিন্তা দর্শনের মানুষ ফিলিস্তিন এবং গাজার মানুষের পাশে আছেন। এক কাতারে দাঁড়িয়ে আমরা বিশ্বিবাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তাগত মত পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু মজলুম ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, অধিকার, মজলুম গাজার মানুষের বিরুদ্ধে জুলুম বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যেকে তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি।

এরপর এক এক করে মঞ্চে উঠে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহদুদুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম, বাংলাদেশ খেলাফল মজলিশের আমির মওলানা মো. মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব সাজিদুর রহমান;

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নিরাপদ সড়ক চাই- এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

পরে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এরপর ফিলিস্তিনের জন্য লাখো মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেক। মোনাজাতের পর অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।

সারাদিনে যা হলো

গত কয়েকদিন থেকেই মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অনলাইন-অফলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব এই জমায়েতে অংশ নিতে মানুষকে আহবান জানান। শুরুতে মার্চ করে মানিক মিয়া এভিনিউতে যাওয়ার কথা থাকলে পরে তা পরিবর্তন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েতের ঘোষণা দেওয়া হয়।

শনিবার বিকেল ৩টায় কর্মসূচি থাকলেও সকাল থেকেই লোকজন মিছিল নিয়ে এসেছেন। রাজধজানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জনতা এই মার্চে যোগ দেন। জনতার বিপুল উপস্থিতিতে রাজধানীর রাজধানীর শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট মোড়,  চানখারপুল, গুলিস্তান, বায়তুল মোকারমের চারপাশ, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন এলাকা, শান্তিনগর, মালিবাগ,  মৌচাক, মগবাজার, ফার্মগেট, কাওরার বাজার মোড়, বাংলামোটর, সায়েন্স ল্যাব, কাঁটাবন মোড়, মৎস্যভবন, শিক্ষাভবন চত্বর, হাইকোর্ট চত্বরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।

এক পর্যায়ে এই সড়কগুলোতে যান চলাচল ব্যহত হলে অনেকেই হেঁটে মার্চে যোগ দেন। চারিদিক থেকে আসা মানুষের মুখে ছিল ফিলিস্তিনের মানুষের মুক্তির স্লোগান, হাতে ছিল ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা।

বিকেলে যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মসূচি শুরু হয়, তখন মানুষের ভিড় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসময় যেন পা ফেলার জায়গা ছিল না। কর্মসূচি শেষ হওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা পরও এই এলাকায় বিপুল জনতার ভিড় ছিল। এছাড়া রাজধানীর  শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার এমনকি রমনার মধ্যে প্রবেশ করেও মানুষ অবস্থান নেন।

বিভিন্ন প্রতীকে ইসরায়েলের নিন্দা

মার্চ ফর গাজায় বিভিন্ন স্থানে মিছিলে প্রতীকীভাবে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতি নিন্দা জানানো হয়। সমাবেশে ঢোল বাজিয়ে ফিলিস্তিনি শিশুর প্রতীকী লাশ নিয়ে প্রতিবাদ জানান একদল তরুণ। এসময় তারা ঢোলের বাজনার তালে তালে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার ও ইসরায়েল ধ্বংসের স্লোগান দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একদল পিকআপ ভ্যানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুত প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল করেন। এছাড়া আরেকদল জনতা নেতানিয়াহু এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদ্রুপাত্মক প্রতিকৃতি তৈরি করেন। এটি নিয়ে তারা ছবির হাট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদর্শন করেন।

এছাড়া বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ছবি, ব্যানার এবং পতাকা দিয়ে তারা ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানান। সমাবেশের মাঝখানে ফিলিস্তিনের একটি দীর্ঘ পতাকা প্রদর্শন করা হয়। অনেকেই ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের আইকন রুমাল মুখে বেঁধে মিছিলে যোগ দিয়েছেন।

বিড়ম্বনায় বিপাকে ভর্তিচ্ছুরা

এদিকে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির মানুষের ঢলের কারণে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। এছাড়া বিকেলে কৃষিগুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতির কারণে এদিন অনেক শিক্ষার্থীই সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেননি। যানজটের কারণে অনেকেই হেঁটে দীর্ঘপথ এসেছেন। অনেক পরীক্ষার্থীই পরীক্ষার হল খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অনেকে ভিড়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজ হারিয়ে গেছে।

রক্ত দিয়ে সঙ্গে থাকতে পারলে স্বস্তি পেতাম

মার্চ ফর গাজায় অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে পেরে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন। তারা বলেছেন, নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে পেরে তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন, তবে রক্ত দিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকতে পারলে তারা মনে পূর্ণ স্বস্তি পেতেন।

মার্চে আগত জায়েদ বিন খালেদ নামে এক তরুণ বাংলানিউজকে বলেন, এটি আমাদের সর্বনিম্ন অবস্থান জানান দেওয়া। ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য এই সমাবেশে যোগ দিতে পেরে শান্তি লাগছে। তবে এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ইসরায়েলি পণ্য বয়কট এবং ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের আলোচনা জোরদার করতে পারব।

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে আসা মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, এভাবে বারবার আমাদের রাজপথে নেমে আসা উচিত। সারাবিশ্বের মুসলমানরা রাজপথে নামলে ইসরায়েলকে রুখে দেওয়া যাবে।

রাজধানীর কেরাণীগঞ্জ থেকে আসা ফাতেমা আমিন একা বলেন, ফিলিস্তিনে নির্মম গণহত্যা দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি ঘরে। আমাদের পক্ষে তো যুদ্ধে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। তবে মানবতার জন্য এখানে এসেছি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫

এফএইচ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।