ঢাকা: দেশে স্থানীয়ভাবে মাছের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি এবং এ খাতের বিকাশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার (এফএও) ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জল ধারণ উৎপাদনে তৃতীয় এবং বৈশ্বিক জলজ চাষ উৎপাদনে ৫ম স্থান অর্জন করেছে।
এগুলো হচ্ছে- মৎস্যসহ জলজ চাষে সীমিত জায়গা ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা, খামারিদের জলজ প্রাণীর মানসম্মত খাবার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ও ক্রয় ক্ষমতা না থাকা, খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা, মানসম্মত বীজের অভাব, খাদ্য নিরাপত্তা ও খামারিদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় না নেওয়া, মাছ চাষ-পরবর্তী ক্ষতির কারণগুলো সম্পর্কে চাষিদের অজ্ঞতা,মাছের আধুনিক সংরক্ষণাগারের সংকট,মাছ আনা-নেওয়ায় পরিবহন সমস্যা ও ’কোল্ড চেইন কাঠামো’ না থাকা ইত্যাদি।
সম্প্রতি খুলনার রুপসীতে সেন্টার অব অ্যাকোয়াকালচার এক্সিলেন্স- এ অনুষ্ঠিত 'ট্রেন দ্য ট্রেইনারস' শীর্ষক প্রশিক্ষণে এক উপস্থাপনায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক কনসালটিং প্রতিষ্ঠান লারিভ ইন্টারন্যাশনাল ও ঢাকা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক কনসালটিং প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনারস যৌথভাবে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় জেমিনি সি ফুডস লিমিটেড, ফিশটেক (বিডি) লিমিটেড এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্সসহ বিভিন্ন অংশীদার সংস্থার ২০ জন প্রশিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার লক্ষ্য ছিল আধুনিক মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধি করা। যাতে তারা এটি গ্রহণ করে পরবর্তীতে দেশের মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। এ প্রশিক্ষকরা পরবর্তীতে ১৮০০ জন মৎস্য খামারিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন।
অনুষ্ঠানে মৎস্য চাষিদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন মডেল ও উপস্থাপনা তুলে ধরেন নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক ডি হিউস অ্যানিমেল নিউট্রিশন প্রতিষ্ঠানের ভিয়েতনাম এবং এশিয়ার পুষ্টি ও সহায়তা পরিচালক ড. আলেকজান্দ্রোস সামার্টজিস; একই প্রতিষ্ঠানের পুষ্টি সহায়তা ও অ্যাকোয়া খাতের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ড. জুলিয়া মাস মুনোজ; প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া অঞ্চলের রপ্তানি পরিচালক এশিয়া মি. জর্ডি ড্রিয়েটেলার; লাওসের ব্যবসা উন্নয়ন ব্যবস্থাপক মি. সাইমন সাঙ্গুইন; আন্তর্জাতিক পণ্য ব্যবস্থাপক মি. ফাম মিন হিয়েন (পার্সি)।
কর্মশালায় জানানো হয়, খুলনা, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার ও পটুয়াখালিতে সিওই কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
উল্লিখিত মৎস্য চাষিদের নেদারল্যান্ডসের আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এ দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম; এর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি খামার পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এতে চাষের সর্বোচ্চ আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ছোট পুকুরে মাছ চাষের অনুশীলন সম্ভব হবে।
’ফুডটেকবাংলাদেশ’ নামে এ প্রকল্পের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে চারটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এ উদ্যোগটি বাংলাদেশে জলজ চাষের উন্নয়নের লক্ষ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটির মেয়াদ হচ্ছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত।
এ প্রকল্পে ডাচ এবং বাংলাদেশি অংশীদারদের মোট ৬ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ রয়েছে। ফুডটেক বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের মধ্যে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের ভিকন ওয়াটার সলিউশন এবং ডি হিউস অ্যানিমাল নিউট্রিশন এবং বাংলাদেশের জেমিনি সিফুড অ্যান্ড ফিশটেক লিমিটেড। ফুডটেক প্রকল্প ও অংশীদারদের লক্ষ্য: উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত খামার ব্যবস্থাপনা অনুশীলন এবং মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে কৃষকদের তথ্য প্রদান ও জ্ঞান সমৃদ্ধকরণ এবং কৃষকদের প্রযুক্তিগত কর্মক্ষমতা বাড়ানো।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৫
এমআইএইচ/জেএইচ