ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারে যদি আওয়ামী লীগের কোনো দালাল থাকে, তাকে বা তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ। সংগঠনটি বলছে, সরকারের অভ্যন্তরে অবাধ দুর্নীতি প্রতিরোধে উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে ‘আওয়ামী দালাল’ ও ‘দিল্লির দালালদের’ অপসারণ করুন।
রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সরকারের অভ্যন্তরে অবাধ দুর্নীতির প্রতিবাদে ‘মার্চ টু দুদক’ কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা। কর্মসূচিটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। কর্মসূচি পালনকারীরা দুদককে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
কর্মসূচিতে দেওয়া বক্তব্যে যুব অধিকার পরিষদের নেতারা অভিযোগ করেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদসহ অনেকের ব্যক্তিগত সচিব ও সহকারী ব্যক্তিগত সচিবরা শত শত কোটি টাকার তদবির বাণিজ্যে জড়িত। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন রেলমন্ত্রী (প্রয়াত) সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সচিবের উদাহরণ টানেন। ]
তারা বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সচিবের গাড়ি থেকে ৭০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। এরপরই তার কাছ থেকে রেল মন্ত্রণালয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাই আমরা উপদেষ্টা পরিষদকে বলতে চাই, উপদেষ্টাদের নিজেদের প্রতিটি কথা ও কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এই জুলাইয়ের আগে কিন্তু আপনাদের ১৫ দিনও মাঠে পাইনি। সুতরাং কথা যা বলবেন এবং কাজ যা করবেন হিসাব-কিতাব করে বলবেন। বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে এখনো আওয়ামী লীগ ও দিল্লির দালালরা ঘাপটি মেরে বসে আছে।
এ সময় যুব অধিকার পরিষদের নেতারা দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিগত সচিব ও সহকারী ব্যক্তিগত সচিবদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায়, উপদেষ্টাদের ‘গদি থেকে লাথি মারার’ সময় আসন্ন বলেও তারা হুঁশিয়ারি দেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফ আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত আত্মত্যাগের পরও এদেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি। একসময়ের অসহায় ব্যক্তিরা আজ কীভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন বলে জানান তিনি। নতুন সৃষ্ট দুর্নীতিবাজদের দ্রুত আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান আরিফ।
মার্চ টু দুদক কর্মসূচি থেকে বক্তারা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতা তানভীর আহমেদের ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির কথা তোলেন। তারা তানভীরের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের সাহস ও পৃষ্ঠপোষকদের পরিচয় প্রকাশের দাবি জানান। পাশাপাশি তানভীর আহমেদকে শুধুমাত্র দল থেকে বহিষ্কার নয়, তাকে ও তার আশ্রয়দাতাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান বক্তারা।
যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হোসাইন নুর বলেন, সংস্কারের নামে চলমান দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। পাশাপাশি সংস্কারের আড়ালে আমলাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার যেকোনো অপচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় যারা হারুনের ভাতের হোটেলে বসে আন্দোলন কর্মসূচিকে প্রত্যাহার করেছিল তারা পরবর্তীতে কীভাবে উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পায়? গুটিকয়েক সমন্বয়ক মাত্র কয়েকদিন আন্দোলনে যুক্ত হয়ে মিডিয়ার সামনে কভারেজ পেয়ে এখন তারা কীভাবে এত সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। আন্দোলনে গণধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আন্দোলন এবং রক্তের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠন করেছি। সেই সরকার যদি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য তৈরি করতে চায় তাহলে আমরা সেটি ভেঙে গুড়িয়ে দেব। আজকে যাদেরকে শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে তাদের দুর্নীতির প্রমাণ কেন দুদক প্রকাশ করছে না? কমিশন কেন উপদেষ্টাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে না। আজকে যদি উপদেষ্টাদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনতে পারেন। তাহলে আগামীতে নির্বাচনের পরে এমপি মন্ত্রীরা যখন দুর্নীতি করবে, তাদেরকে কীভাবে আইনের আওতায় আনবেন।
যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সংসদের এই সহ-সভাপতি আরও বলেন, আমরাই সরকারের বিরুদ্ধে সব সময় কথা বলতে চাই না। আমরা চেয়েছি সরকারকে সহযোগিতা করতে। তারা যদি সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করত, তাহলে বর্তমানের মতো এমন দুর্নীতি হতো না, বরং অনেকটাই কমে আসতো।
ইএসএস/এমজে
বাংলাদেশ সময়: ৬:০৩ পিএম, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ /