ঢাকা: পুলিশ বাহিনী নিয়ে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম।
তিনি বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশন নিয়ে আমরা খুবই আশান্বিত ছিলাম।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পুলিশ সপ্তাহ সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এসব কথা বলেন।
একটি চক্র মিথ্যা মামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আত্মস্মাৎ করছে। বিষয়টি পুলিশ কীভাবে দেখছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আইজপি বলেন, আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় একটি মামলার বাদী যখন কোনও অভিযোগ লিখিত নিয়ে আসেন, সেটাই আমাদের গ্রহণ করতে হয়। প্রাথমিকভাবে এটা সত্য, না মিথ্যা সেটা আমাদের যাচাই করার সুযোগ নেই। তার অভিযোগটিই আমাদের মামলা হিসেবে নিয়ে নিতে হয়। পরে আমরা তদন্তে গিয়ে সত্য-মিথ্যা যাচাই করে, সত্যতা তদন্তে নিয়ে আসি। এখন ৫ আগস্টের পরে দেখা গেছে, অনেক মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের চেয়ে অন্যদের নাম দেওয়া হচ্ছে। তবে সেটার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে, যাতে করে কোনো নিরাপরাধীকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করা না হয়। সেসব মামলার তদন্ত করে আমরা প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করছি।
আরেক প্রশ্নের জাববে তিনি বলেন, দেশ চালাবেন রাজনীতিবিদরা। তারা তাদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন। তারাই দেশের কল্যাণ ও মানুষের জন্য কাজ করেন। অনেক দেশে পুলিশের মূল ফাংশনাল বিষয়টা একটি স্বতন্ত্র কমিশনকে দেওয়া হয়। আর যেটা প্রশাসনিক অংশ যেমন বদলি, পদোন্নতি, বেতনের বিষয়গুলো নির্বাহীর হাতে দেওয়া হয়। এমন ব্যবস্থা কিন্তু শ্রীলঙ্কায় আছে। দিন শেষে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে।
গণঅভ্যুত্থানের ১০ মাস কেটে গেছে। পুলিশ বাহিনীর দুই লাখ সদস্য। জুলাই আগস্ট আন্দোলনে গুলি করার নির্দেশ কারা দিয়েছিলো। এমন প্রশ্নের জবাবে বাহারুল বলেন, প্রতিটি মামলা আমরা তদন্ত করছি। এসব মামলায় তথ্য উঠে আসছে। মামলার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫০০। এর মধ্যে হত্যা মামলার সংখ্যা ৬০০। মামলার তদন্ত শেষ হলে আমরা বলতে পারবো, যে কতজন লোক অর্ডার করেছিলেন, কতজন গুলি করেছিলেন, নিহত কত। পুরো প্রক্রিয়া শেষ না হলে বলা যাচ্ছে না।
মিথ্যা মামলার শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য কি ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে। পাশাপাশি এখনো মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা দায়েরকারী বাদীর বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগে মামলা হতে পারে। তবে সেটা করা হবে মামলার তদন্ত শেষে। নিরাপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না। ৮ মাস হয়ে গেছে বেশিরভাগ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ার কথাটা সঠিক। তবে এখন পর্যন্ত হত্যা মামলা না হলেও অন্যান্য মামলার মধ্যে দুটি মামলায় ডিএমপি চার্জশিট দিয়েছে। কিন্তু তদন্তটা তাড়াহুড়োর বিষয় নয়, এটা করতে গেলে আসলে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে না। তাই ধৈর্য ধরতে হবে। আর অনেকেই ভুল করছেন, মামলার বাদীর সঙ্গে কোর্টে গিয়ে ভুল নাম দিয়েছেন এমন কথা বলছেন। বিনিময়ে তারা সুবিধা নিচ্ছেন। কিন্তু এটা ভুল পথ। এমন পথে না যাওয়ার অনুরোধ করছি।
পুলিশের যানবাহন সংকট কাটাতে অগ্রগতি কতদূর- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রায় ৪০৫টি গাড়ি পুড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমরা একটিও গাড়ি পাইনি। ২০০ পিক আপ কেনার একটি সিদ্ধান্ত শেষ পর্যায়ে আছে। এখনো পাইনি, এভাবেই চলতে হবে। পুলিশের সক্ষমতা ফেরানো একটি চলমান প্রক্রিয়া। ৫ আগস্টে আগে যে পুলিশ ছিলো, সেটাই সক্ষম পুলিশ বা কার্যকর পুলিশ সেটা প্রত্যাশা অনুযায়ী পুলিশ ছিল না। আমরা চাই প্রত্যাশার পুলিশ তৈরি করতে। কর্তৃত্বপরায়ন পুলিশকে সেবা দানকারী পুলিশে রূপ দেওয়া কঠিন। যাতে করে সাধারণ মানুষ পুলিশকে দেখে ভয় না পায়। সবাই যাতে করে বুঝতে পারে পুলিশ মানুষের সেবা করতেই কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি আগের পুলিশের থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়ানো।
যারা পুলিশ পদক পাচ্ছেন তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এবার ৬২ জন পুলিশ পদক পাচ্ছেন। সাহসিকতা ও সেবার জন্য এ পদক পাচ্ছেন। আপনারা জানেন একজন পুলিশ সদস্য ছিনতাইকারীকে আকড়ে ধরে রেখেছিল। ছিনতাইকারী তাকে ছুরিকাঘাত করার পরও তিনি ছিনতাইকারীকে ছাড়েনি। তার মতো পুলিশ সদস্যদের সাহসিকতার পদক দেওয়া হচ্ছে। আবার ৬ আগস্টে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অনেক পুলিশ সদস্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। তারা অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যা করার উদ্দেশে। সেই সময়ে সাবেক আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতনরা সাহসিকতা নিয়ে সেখানে গিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও যারা বিভিন্নভাবে সাহসিকতা দেখিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করেছেন তাদেরকে সাহসিকতার ও সেবার পদক প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি পুলিশ সদস্যের সাহসিকতা এবং সেবামূলক কাজের বিবরণ নেওয়া হয়। তারা লিখিত আকারে তাদের কাজের বিবরণ উল্লেখ করে আমাদের কাছে পাঠান। সেখান থেকে একটি কমিটির মাধ্যমে এ পদকের জন্য নির্বাচিত করা হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আপনারা জানেন ৫ আগস্টের পরে পুলিশের মনোবল এবং কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছিল। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাত্রা করেছিলাম, পুলিশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসে জনগণকে সেবা দেওয়া। প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। যেমন এক-দেড় মাস ধরে একটা শ্রেণি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা হুটহাট করে ঝটিকা মিছিলসহ নানা অপকর্ম চালানোর চেষ্টা করছে। তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে এবং সমাজে একটি মিথ্যা ও অপচেষ্টা চালানো চেষ্টা করছে। সেগুলো আমরা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। আবার বিশেষ উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া চেষ্টা করছি।
দেশে জঙ্গিবাদ আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে আইজিপি বলেন, দেশে জঙ্গি নেই, এ নিশ্চিয়তা কেউই দিতে পারবে না। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রেণে পুলিশসহ অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে। বিগত সময়ে জঙ্গিবাদের অপরাধে অনেকে কারাভোগ করেছেন। ২০০৫ সালের সময়ে জেএমবিসহ অন্য জঙ্গিদের ইতিহাসতো আমরা জানি। এ মুহূর্তে আমার সজাগ আছি। অনেকগুলো সংস্থাই জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করছেন। তাদের ওপরে বিশেষ নজর রাখছেন। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা কারার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, এআইজি (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর ও পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৫
এসসি/জেএইচ