ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, ০১ মে ২০২৫, ০৩ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

পুলিশ যে আইনে চলে তার পদে পদে সমস্যা: সলিমুল্লাহ খান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪১, মে ১, ২০২৫
পুলিশ যে আইনে চলে তার পদে পদে সমস্যা: সলিমুল্লাহ খান বক্তব্য রাখছেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পুলিশ যেই আইনে চলে তার পদে পদে সমস্যা আছে উল্লেখ করে লেখক ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে যে পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে।

পুলিশের যে অবস্থানে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষয়ে মাঝেমধ্যে আলোচনা করা উচিত এবং খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন।  

ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, পুলিশ সমাজের অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে। কারণ এটা হচ্ছে জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে গণতন্ত্র।

সভায় সাবেক আইজিপি আব্দুল কায়ুম বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেল, একটা গণ-অভ্যুত্থান হয়ে গেল। বাচ্চা ছেলেরা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম তা কল্পনা করা যায় না, ধারণাও করা যায় না। আগে আমরা সেবা দিতে পেরেছি, কিন্তু গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। গণতন্ত্র থাকলে যে সুবিধাটা হয় সেটা হচ্ছে যে পাঁচ বছর পর আপনাকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং ম্যান্ডেট নিতে হবে, আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। ২০০৯ সালের নির্বাচনে যে খুব নিখুঁত হয়েছে তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয় খুন-গুম আর সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না, সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করেছে।

আব্দুল কাইয়ুম বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, আমাদের আবার নতুন করে মানুষকে সেবা দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করতে হবে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে, অনেক বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা যদি দরকার এই কথা বলা হয়, তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কী দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না, গন্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজকে কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারব সেটার কোনো গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না।  

এই সমাজে বিষাক্ত একটা বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা আমাদের বুঝতে হবে। এতদিন যাদের প্রমোশন হয়নি এবং তাদের মধ্যে যাদের চাকরি অল্প সময় আছে, তাদের দুই র‍্যাংক করে প্রমোশন দেওয়া উচিত। তারা অবসরে যাওয়ার আগে তাদের যেটা পাওনা সেটা দেওয়া উচিত।  

নুরুল হুদা বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। আমাকে একজন আইজিপি বলেছিলেন, ঘুষ খাওয়ার থেকে শ্বশুরবাড়ি থাকা ভালো।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল হুদা, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুল।

এমএমআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।