ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

দাবি মানার আশ্বাসেও সরছেন না চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যরা, গাড়ির সামনে শুয়ে পথরোধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫২, মে ১৮, ২০২৫
দাবি মানার আশ্বাসেও সরছেন না চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যরা, গাড়ির সামনে শুয়ে পথরোধ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে প্রতিনিধিদলের গাড়ির সামনে শুয়ে চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যদের পথ রোধ। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: তিন দফা দাবি মানার মৌখিক আশ্বাসেও সরছেন না আন্দোলনরত চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যরা। গাড়ির সামনে শুয়ে আলোচনা করতে আসা প্রতিনিধিদলের পথ রোধ করে রেখেছেন তারা।

রোববার (১৮ মে) বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রাঙ্গণের ভেতরে সেনা সদর দপ্তর থেকে আসা প্রতিনিধিদলের গাড়ির সামনে শুয়ে তাদের পথ রোধ করে রাখতে দেখা যায় আন্দোলনরত সাবেক সেনা সদস্যদের। আন্দোলনে চাকরিচ্যুত সেনা সদস্য ছাড়াও তাদের অনেকের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন।

এ সময় তাদের দাবি আদায় সংক্রান্ত বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। আন্দোলনরত চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যদের দাবিগুলো হলো-

১। চাকরিচ্যুত সময় থেকে অদ্যাবধি সম্পূর্ণ বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ চাকরি পুনর্বহাল করতে হবে।

২। যদি কোনো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের চাকরি পুনর্বহাল করা সম্ভব না হয় তাহলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সরকারি সকল সুযোগ সুবিধাসহ সম্পূর্ণ পেনশনের আওতাভুক্ত করতে হবে।

৩। যে আইন কাঠামো ও এক তরফা বিচার ব্যবস্থার প্রয়োগে শত শত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সেই বিচার ব্যবস্থা ও সংবিধানের আর্টিকেল-৪৫ সংস্করণ করতে হবে।

এছাড়া গতকাল শনিবার (১৭ মে) গ্রেপ্তার হওয়া আন্দোলনকারীদের মুখ্য সমন্বয় সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত সৈনিক নাইমুল ইসলামের মুক্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা।

ছবি: ডিএইচ বাদল

রোববার (১৮ মে) বেলা ১২টা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তিন দফা দাবিতে ‘বাংলাদেশ সহযোদ্ধা প্লাটফর্ম - বিসিপি’ এর ব্যানারে অবস্থান নেন বিভিন্ন সময় চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যরা। সেখান থেকে তারা জাহাঙ্গীর গেট অভিমুখে লং মার্চ করার প্রস্তুতি নেন। সে সময় পুলিশ তাদের লং মার্চে বাধা দেয়। এ সময় একটি পুলিশের একটি জলকামানও সেখানে দেখা যায়। তবে পুলিশ কোনো ধরনের লাঠিচার্জ করেনি।

এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের জানানো হয়, সেনা সদর দপ্তর থেকে একটি প্রতিনিধি দল তাদের সঙ্গে কথা বলতে আসছে। এতে কিছুটা নিবৃত্ত হন আন্দোলনকারীরা। পরে দুপুর ২টায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রেসক্লাবে আসেন। তারপর প্রেসক্লাবের ভেতরে আন্দোলনকারীদের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তারা দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন।  

এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় বৈঠক শেষে সেনা সদর দপ্তরের প্রতিনিধিদল বের হয়ে আন্দোলনকারীদের জানান, তাদের দাবিগুলো যুক্তি সহকারে দেখা হবে। তারা যেন তাদের চাকরি ফেরতের আবেদন সেনা সদর দপ্তরে জমা দেন। এছাড়া আগামীকাল সোমবার (১৯ মে) আন্দোলনকারীদের সদরদপ্তরে কথা বলতে আমন্ত্রণও জানান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তাদের দাবি-দাওয়াগুলো শুনেছি। আমরা সকল দাবি দাওয়া নোট করেছি। এগুলো নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

তিনি বলেন, তাদেরকে বলেছি, সবাইকে আলাদা আলাদা করে আবেদন করতে। আবেদনের ঠিকানা আমরা দিয়ে গেছি। ইন্ডিভিজুয়াল কেসের মেরিট অনুযায়ী আমরা বসব। আলাপ-আলোচনা করে আপনাদের যতদ্রুত সম্ভব যতখানি দেওয়া সম্ভব আমরা অ্যাড্রেস করব।  এটাও বলেছি যে, সেনাবাহিনীর যে আইনশৃঙ্খলা এটা অবশ্যই মেইনটেইন করতে হবে। আমরা মানবিকভাবে যতটুকু সাহায্য করার করব।  

তারা কি আপনাদের কথা মেনেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ তারা মেনেছেন। তারা অপেক্ষা করবেন। আমাদের কার্যক্রম ধীরে ধীরে চলবে।  

গতকাল আন্দোলনকারীদের একজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওটা একটা আইনগত বিষয়। মামলার বিষয় এবং তাকে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহায়তা করা যায় আমরা করব। ৮০০- এর মতো অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়েছে, যার মধ্যে একশোর বেশি আমরা অ্যাড্রেস করেছি।

আপনাদের কথায় কি তারা সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনে তো হলো সন্তুষ্ট। সবশেষে তিনি এই কর্মসূচি সমাপ্ত করার অনুরোধও জানান।

কিন্তু এই মৌখিক আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেননি চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যরা। বরং তারা গিয়ে প্রতিনিধিদলের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন এবং স্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় আন্দোরনকারীদের নেতৃত্বে থাকা সমন্বয়করাও চেষ্টা করে তাদের সরাতে পারেনি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতিনিধিদল আন্দোলনকারীদের সরাতে বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ছবি: ডিএইচ বাদল

আন্দোলকারীরা জানান, মৌখিক আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না। সেনাবাহিনী থেকে লিখিত না দেওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পাশাপাশি আজকের মধ্যে গ্রেপ্তার সেনা সদস্যকে মুক্তি দিতে হবে।  

এসসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।