ঢাকা: রাজধানীর কাকরাইল মোড়, মৎস্য ভবন ও হাইকোর্ট এলাকায় বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
হাইকোর্ট জোনের এডিসি মিনহাজ বলেন, আমাদের হাইকোর্ট এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এ প্রস্তুতি নিয়েছি।
সরেজমিনে দেখা দেখা গেছে, হাইকোর্টের মূল গেটে পুলিশের পাহারা ও ভেতরে রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিপির অবস্থান। এছাড়া রয়েছে সাজোয়া যানসহ অন্যান্য সামরিক গাড়ি।
অপরদিকে, সকাল থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে মৎস্যভবন ও কাকরাইলে উদ্দেশে আসতে দেখা গেছে।
রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ মে) টানা আটদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপি ও ইশরাক সমর্থকরা।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে কাকরাইল মোড় ও মৎস্য ভবন হাইকোর্ট এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
গতকাল বুধবার (২১ মে) ইশরাককে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে রিটের রায় দেওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করবেন বলে আদালত সময় দেন।
তাই গতকাল বিকেল থেকে ইশরাক সমর্থকরা যমুনা সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদের মোড়ে অবস্থান নেন। সারারাত ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সেখানেই বসে আছেন।
স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল করে রেখেছেন কাকরাইল মোড় এলাকা। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে যমুনা ও কাকরাইল মোড় এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ইশরাক সমর্থকরা মৎস্য ভবনে মোড় বন্ধ করে দিয়ে মিছিল করছেন। এ সময় শত শত অফিসগামী গাড়ি, মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।
সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।
এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
তখন ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, ইসি এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। চ্যালেঞ্জ করল না। আবার খবরে দেখলাম, আইন উপদেষ্টা বলছিলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যে মতামত চাওয়া হয়েছিল, সেজন্য অপেক্ষা না করে এই নোটিফিকেশন জারি করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এমন কোনো আদেশ দিতে পারেন না যে আদেশের কোনো কার্যকারিতা নেই। এখানে টার্ম শেষ হয়ে গেছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়র পদশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।
পরে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
এদিকে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচিতে নেমেছেন তার সমর্থকরা। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে তারা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। পরবর্তীতে বুধবার থেকে মৎস্যভবন, কাকরাইল ও যমুনার সামনের রাস্তায় অবস্থান করে বিক্ষোভ করছে ইশরাকের সমর্থকরা।
জেএইচ