ঢাকা, শনিবার, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৪ মে ২০২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

পল্লবীতে চালককে হত্যা করে সিএনজি ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৫

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট    | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৫, মে ২৩, ২০২৫
পল্লবীতে চালককে হত্যা করে সিএনজি ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৫ গ্রেপ্তার ৫ সদস্য

ঢাকা: চালককে হত্যা করে সিএনজি ছিনতাই চক্রের হোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

শুক্রবার (২৩মে) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের র‍্যাব-৪ এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার ও লুষ্ঠিত সিএনজি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. সৌরভ সরকার (২০), মো. ইয়াছিন মিয়া (২০), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, মো.মুসা (২৫), মো.দুলাল মিয়া (৩২), ও মো.শাহজালাল (২৬)।

র‍্যাব-৪ অধিনায়ক মো.মাহবুব আলম বলেন, গত (১৬ মে) রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এর ৪ নং গেট সংলগ্ন এলাকায় একটি মরদেহ পাওয়া যায়। এ তথ্য র‍্যাব-৪ এর আভিযানিক দল জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি মরদেহটি আব্দুল অজিদ ওরফে বাচ্চুর। যিনি পেশায় একজন সিএনজি চালক ছিলেন।

তদন্তের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় র‍্যাব-৪ এর আভিযানিক দল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করি। পরবর্তীতে আভিযানিক দল বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে এ হত্যাকাণ্ড ও সিএনজি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত চক্রের হোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত সিএনজি উদ্ধার করে।

গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় সঙ্গে ৬-৭ জন জড়িত ছিল। ঘটনার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ছিনতাই পর্যন্ত এ ৬-৭ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। এ ঘটনা মূলত পরিকল্পনা করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মুসা, সৌরভ এবং ইয়াছিন পরস্পর বন্ধু এবং তারা ছোটখাটো চুরি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। সেখানে তারা পরিকল্পনা করে একটি সিএনজি ছিনতাইয়ের, যা করতে পারলে তাদের ভালো টাকা আসবে। এ ধরনের ছিনতাই ঢাকায় করা সহজ বলে তারা ঢাকায় একটি সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।

তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুসারে গত (১৫ মে) সন্ধ্যায় সৌরভ এবং ইয়াছিন আগারগাঁয়ে মিলিত হয়। তারা মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে একটি উপযুক্ত টার্গেট খোঁজার চেষ্টা করে। আনুমানিক রাত তিনটার দিকে সৌরভ শ্যামলী ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে থেকে আব্দুল অজিদহে বাচ্চুর সিএনজিটি ভাড়া করে। সিএনজিটি নিয়ে ৬০ ফিট পানির ট্যাংকির সামনে পূর্ব থেকে অপেক্ষমাণ ইয়াছিনকে নিতে আসে। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা সিএনজি ড্রাইভারকে সিএনজিটি ঘুরাতে বলে। সিএনজি ড্রাইভার সিএনজি থেকে নেমে সিএনজি ঘুরাতে গেলে তারা হঠাৎ মাথার পিছনে থেকে আঘাত করে এবং মুসার পরামর্শে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারা বেশ কয়েকটি জায়গায় মরদেহ ফেলানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএস এর ৪ নম্বর অবকাশ ক্যান্টিনের দক্ষিণপাশে সিরামিক প্রাচীরের পাশে ফেলে সাভারে পালিয়ে যায়।

সেখানে তারা সিএনজিটি পরিষ্কার করে সন্ধ্যার দিকে তিনজনে মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। পূর্বাচল পার হওয়ার পরে চোরাই সিএনজি বেচাকেনা চক্রের দলনেতা আল আমিনের সহযোগী শাহজালাল ও দুলাল এসে সিএনজিটিতে উঠে এবং সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে যায়। পরদিন আল আমিন এসে শাহজালাল ও দুলালের সহায়তায় পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকায় সিএনজিটি ক্রয় করে কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিয়ে যায়। সেখানে সে গাড়িটির রঙ ও কভার পরিবর্তন করার জন্য একটি ওয়ার্কশপে দেয়। সেখান থেকে গতকাল বিকেলে র‍্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ওই সিএনজিটি উদ্ধার করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রের হোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার সবাই মাদকাসক্ত। মূলত মাদক ও জুয়ার টাকা জোগাতে তারা এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। তবে তাদের পরিকল্পনা ছিল সিএনজি ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডের টার্গেট ছিলনা। কিন্তু ছিনতাইয়ের সময় প্রথম আঘাত বেশি আক্রান্ত করে ভিকটিমকে। যার কারণে ভুক্তভোগী মারা যায়।  

গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীনসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে র‍্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান র‍্যাবের এ কর্মকর্তা।

এমএমআই/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।