লালমনিরহাট: কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি হয়েছে। এতে তিস্তা নদীর উভয় তীরে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রোববার(১ জুন) দুপুর ১২ টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮০ মিটার। যা বিপদসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬ টায় ২১ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে।
গত রোববার সকাল ৬ টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপদসীমার ২১ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯ টায় তা কমে গিয়ে বিপদসীমার ৩০ সে.মি. নিচ দিয়ে এবং দুপুর ১২ টায় আরও কমে গিয়ে বিপদসীমার ৩৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে তিস্তা নদীর উভয় তীরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
উজানে ভারত সরকার তিস্তা নদীর পানি একক ব্যবহার করতে গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে। সেখানে অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশকে না জানিয়ে হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি করে। আবার শুষ্কমৌসুমে সম্পূর্ণরূপে পানি দেয়া বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ উজানের ঢল মোকাবেলায় এবং ডালিয়া ব্যারেজ রক্ষার্থে বর্ষাকালে ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখে কর্তৃপক্ষ। তিস্তা ব্যারেজের ৫২টি জলকপাটের মধ্যে ৮ টি জলকপাট দিয়ে সেচ প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাকি ৪৪টি জলকপাট দিয়ে লালমনিরহাট রংপুর অংশে তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই বর্ষা এলেই লালমনিরহাট অংশের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় নদী তীরবর্তী অঞ্চলের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চরাঞ্চলের ছোট ছোট রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে গেছে। যোগাযোগের মাধ্যম হয়েছে নৌকা ভেলা। পানি আরও বাড়লে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছে নদী পাড়ের মানুষ। উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় উজানের ঢল বাড়ার শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৪/৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবার গবাদি পশুপাখি আর শিশু বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পড়েছেন বড় বিপাকে। চার পাশে অথৈ পানি থাকায় টয়লেটের ব্যবস্থা নিয়েও অসুবিধায় আছেন তারা। বিশেষ করে নারীরা সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন বন্যার সময়। এসব অঞ্চলের সবজিসহ নানান ফসলের ও মাছ চাষিদের ক্ষতি হয়েছে।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, সকালে তিস্তার পানি প্রবাহ বাড়লেও দুপুরে কমে যায়। উজানে ভারতে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে উজানের ঢলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
এমএম