ঢাকা, বুধবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জুন ২০২৫, ২১ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী, দিনেও টাঙাতে হচ্ছে মশারি

দেলোয়ার হোসেন বাদল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:৩৩, জুন ১৮, ২০২৫
মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী, দিনেও টাঙাতে হচ্ছে মশারি

দিন-রাতে মশার কামড়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে রাজধানীবাসী। বিশেষ করে গভীর রাতে মশার অত্যাচার কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

মশার অত্যাচারে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, দোকানপাট, অফিস-আদালত, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সব জায়গায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

রাজধানীর জুরাইন, পোস্তগোলা, শ্যামপুর কদমতলীর মুরাদপুর হাই স্কুল রোড, পোকার বাজার রোড, মেডিকেল রোড, মাদ্রাসা রোড তিনশ ফিট রোড, ভবানী বাগিচা রোড সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মশার যন্ত্রণায় দিনের বেলায় বেশির ভাগ বাসার ঘরে মশারি টাঙিয়ে রেখেছে। আবার কেউ কেউ দিনেও ঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মশার কয়েল কিংবা ধুপ জ্বালিয়ে রাখছে।

এসব এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। দেখে মনে হচ্ছে, গত কয়েক মাস ড্রেনেজের ময়লা পরিষ্কার করা হয়নি। বাসাবাড়ী ও এলাকার স্থানীয় বাজারের সব উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জনা সব ড্রেনের মধ্যে ফেলানো হচ্ছে ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। আর সেই বদ্ধ পানিতে মশার প্রজনন বৃদ্ধি ও উপদ্রব বাড়ছে।

এদিকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে এলাকাবাসী এক আতংকে জীবন পার করছে। দিন দিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। রোগী বাড়তে থাকলেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। এ কারণে শুধু রাজধানীতে নয়, ডেঙ্গু ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

দনিয়া হাইকুলের শিক্ষক  আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন লোকজনের কাজ কর্ম নেই বললেই চলে। ড্রেন ও রাস্তাঘাটগুলো পরিষ্কার করা হয় না। ড্রেন বন্ধ হয়ে যত্রতত্র ময়লা জমে আছে। নিয়মিত মশার ওষুধও ছিটানো হয় না। প্রতিবছর এই এলাকায়  ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে তারপর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বড় অফিসাররা এদিকে নজর দেন না।

মেরাজ নগর স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ বলেন, আমাদের কাছে দিনরাত সমান। মশার যন্ত্রণা ঘরে বাইরে কোথায়ও শান্তি নেই। মশার কয়েল কিংবা ধুপ জালিয়ে ও নিস্তার পাওয়া যায় না। মশক নিধন কর্মীরা সপ্তাহে দুইএকবার এসে নাম মাত্র ওষুধ ছিটিয়ে যায়। মেশিনে আদৌও মশা মরার ওষুধ আছে? নাকি লোক দেখানো বুঝি নাকি, কারণ মশা তো কমে না।

মেডিকেল রোডের ফারজানা ইসলাম বলেন, মশার যন্ত্রণায় ঘরে দিন ও রাত মশারি টাঙিয়ে সন্তানদের রাখতে হচ্ছে। কারণ আমাদের এলাকায় প্রচুর মশার উপদ্রব। আশ-পাশে ডেঙ্গুরোগীও বাড়ছে। তাই সন্তানদের নিয়ে সারাক্ষণ খুব দুশ্চিন্তায় থাকি।

 

মশকনিধন কর্মী কামরুল ইসলাম বলেন, সুপারভাইজার আনোয়ার হেসেনের তত্তাবধানে একটি ওয়ার্ডে ছয়জন কর্মী মশার ওষুধ ছিটানোর কাজে নিয়োজিত থাকি। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ছয় দিন আমরা কাজ করে থাকি। মশার ‍ওষুধ ছিটালেই মশা কমে না। এলাকাবাসীরও সহযোগিতা ও সচেতনতা দরকার। সুযোগ পেলেই তাদের বাড়ির ময়লা আবর্জনা  রাস্তায় বা ড্রেনে ফেলে দিয়ে যায়। এতে করে মশা বৃদ্ধি পায় আর পরিবেশ ও দূষিত হয়।

কদমতলীর  এলাকার জাকির খান জানান, তিন মাসের বেশি সময় ধরে এলাকায় কোন ফগিং স্প্রে  মেশিনের মশক নিধন কর্মী দেখিনি। কাজ না করেই সরকারি বেতন ঠিকই খাচ্ছে। আর মশার অতিষ্ঠে আমরা ঘরে বাইরে থাকতে পারছি না।

এলাকাবাসীর মতামত, মশার ওষুধ ক্রয়, সংরক্ষণ, ব্যবহারে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধ ছিটানোর কাজে নিয়োজিত জনবলকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে।

মশা প্রজনন মৌসুম, প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিতপূর্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, লার্ভা ধ্বংস উপযোগী ওষুধ ছিটানো, ড্রেনসহ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।