ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

আস্থার প্রতীক হয়ে এগিয়েছে বাংলানিউজ

তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:১৩, জুন ৩০, ২০২৫
আস্থার প্রতীক হয়ে এগিয়েছে বাংলানিউজ

ষোল বছরে পদার্পণ করলো বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। এ শুভক্ষণে সকল পাঠক, দর্শক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।

বাংলানিউজের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় যারা পাশে থেকেছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

ষোল বছর আগে এদেশের গণমাধ্যমে অনলাইন আত্মপ্রকাশ ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। গণমাধ্যম হিসেবে অনলাইন নিউজপোর্টালের স্বপ্ন দেখাটাই যেন ছিল এক ধরনের রসাত্মক বিষয়। সেসব ছাপিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও তার সফল প্রয়োগ আজকের বাংলানিউজ। দীর্ঘ এই পথচলায় পোর্টালটির সকল কর্মীকে নিরলস পরিশ্রম আর কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। বিশেষ করে গত ষোল বছরে বাংলাদেশের কাঁধে চেপে বসা ‘সিন্দাবাদের দৈত্য’ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যেসব কালাকানুন চাপিয়ে দিয়েছে, তার বাইরে যেতে পারেনি বাংলানিউজ। স্বৈরশাসকের নানা সময়ের নানাবিধ অনায্য দাবি পূরণ করতে গণমাধ্যমের মূল চরিত্র থেকে সরে যেতে হয়েছে কখনও কখনও। টিকে থাকার এক অসম লড়াই করতে হয়েছে ষোল বছর ধরেই।

রাজনীতির আঁচ থেকে মুক্ত নয় কোনো গণমাধ্যম। বেশ কয়েকজন সুবিধাবাদী সাংবাদিকের ভূমিকায় সাংবাদিক সমাজের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে। বর্তমানে সাংবাদিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। এক রানির পলায়নের পর আরেক রাজার দোসর হয়ে পড়ছে কী না গণমাধ্যমকর্মীরা, সে প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে। অনেকে সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ নিজ দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখাতে গিয়ে অথবা সুবিধাভোগী হওয়ার কারণে এখনও স্ব-স্ব গণমাধ্যমে সেন্সরশিপ জারি রেখেছেন। তাই এখনও সাংবাদিকতা রয়ে গেছে ঝুঁকির মধ্যেই।

গণতন্ত্রের গলাটিপে ধরে গণমাধ্যমের গলা চেপে ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। বানিয়েছিলেন তোষামোদী মিডিয়া হাউস, সম্পাদক ও সাংবাদিক। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরিয়ে ৫ আগস্ট সরকার প্রধানের পদ থেকে শেখ হাসিনা যখন স্বজনদের সাথে করে সপরিবারে পালিয়ে যান— তখন তার লাখ লাখ নেতাকর্মী অরক্ষিত ও অনিরাপদ। গুটিকয়েক মানুষের লুটপাটের করুণ পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের এসব সাধারণ নেতাকর্মীকে। এ নিয়ে কেউ লেখার সাহস পর্যন্ত করছে না। আবার ষোল বছরের লুটপাট, হত্যা, গুম, খুনের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখনও প্রকাশিত হচ্ছে না। এলাকায় এলাকায় বাহিনী গঠন করে বিরোধী নেতাকর্মীদের যেভাবে অত্যাচার আর নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা, সে বিবরণ এখনও প্রকাশ হচ্ছে না।

এদিকে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমগুলো, বিশেষত পশ্চিমা মিডিয়া, সঠিক তথ্য গোপন করছে। ইরানের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত ও অতর্কিত হামলা নিয়ে প্রচারণার ধরণে এটা স্পষ্ট ধরা পড়েছে— পশ্চিমা মিডিয়া হঠাৎ একপেশে ও অন্যায় আক্রমণ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। বরং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং তা প্রতিহত করার নাম করে সে দেশে ইসরায়েলের হামলার পক্ষে এক ধরনের যুক্তি ও বয়ান তৈরি করছে।

পশ্চিমের এ ধরনের প্রচারণা আমরা দেখেছি ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনের সময়। ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্র আছে ও তা নির্মূলের দায়িত্ব আমেরিকার— এমন প্রচারণা আমেরিকাসহ গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনমত গড়ে তুলে তারপর আক্রমণ করে বসে। আফগানিস্তানে তালেবানকে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাধীন দেশে আক্রমণ করে দখল করে নেয় সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা। কিন্তু ২০ বছর টানা যুদ্ধ করে পরাজিত হয়ে আফগানিস্তান ছাড়তে হয় আমেরিকাকে। আক্রমণ শুরুর আগে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এই অন্যায্য আক্রমণ চালানোর পক্ষে জনমত তৈরি করতে গিয়ে তালেবানকে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন বলে হাজির করে। কিন্তু তাদের সাথে চুক্তি করে দেশ ছাড়ে। এই পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে কোনো তথ্য প্রচার হয়নি এসব গণমাধ্যমে।

এসব কথা লেখার উদ্দেশ্য— গণমাধ্যম কী করছে আধুনিক বিশ্বে, তা জানা ও বোঝার চেষ্টা করা। তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশ দখল বা অপছন্দের সরকার বদলের ক্ষেত্র তৈরিতে পশ্চিমা গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। সে কারণে এদের ওপর বাংলাদেশের সাধারণ জনমানুষসহ তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের আস্থা তলানিতে।

নতুনভাবে আবির্ভূত হওয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন মূল গণমাধ্যমের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের প্রধান ভূমিকা রেখেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ষোল বছরের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের ভূমিকার কারণে শক্তিশালীভাবে বেড়ে উঠেছে সামাজিক গণমাধ্যম। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স হ্যান্ডেল হয়ে উঠেছে প্রধান বার্তাবাহক। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কোনো গণমাধ্যমের ভূমিকা চোখে পড়েনি। তবে অনলাইন গণমাধ্যম হিসেবে ছাত্র-জনতার সঙ্গে থেকেছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলোতে অনেকটা স্রোতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল বাংলানিউজ টিম। দেশবাসী এখন যে বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে, তার সাথী হতে পেরে বাংলানিউজ টিম গৌরবান্বিত বোধ করে।

দেশের ক্রান্তিকালে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে সাহস দেখিয়েছে, সেজন্য টিম বাংলানিউজকে ধন্যবাদ। পাশাপাশি পাঠক হিসেবে আপনারা আমাদের প্রতি যে বিশ্বাস ও ভালোবাসা দিয়েছেন, সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই অদম্য গতির সঙ্গে তাল মিলিয়েই মূল গণমাধ্যমকে টিকে থাকতে হবে। আজও সঠিক খবরের আস্থার প্রতীক মূল গণমাধ্যম। বাংলানিউজ সেই আস্থা ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে সাহস দেখিয়েছে। আগামী দিনের সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাবে বাংলানিউজ। সকলকে আবারও অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।