রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী যে ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেই ভবনেরই নিচতলার একটি কক্ষ তার প্রতিদিনের শ্রেণিকক্ষ। ক্লাস শেষে ওই ভবনের নিচতলারই অন্য আরেকটি কক্ষে তার স্পেশাল বৃত্তি ব্যাচের কোচিং।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাংলানিউজের কথা হয় উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাফ আদিয়াত সোয়াদের সঙ্গে। তার সঙ্গে ছিলেন মা রীনা নাসরিন। আজ তারা স্কুলের ভেতরে যাওয়ার জন্য মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন।
আকাফের মা রীনা জানান, আকাফের কোচিং গ্রুপে মেসেজ দিয়ে জানানো হয় যে, ব্যাগ শিক্ষকদের জিম্মায় রয়েছে। স্কুলে এসে ব্যাগ নিয়ে যেতে পারবে।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আকাফ জানায়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়া ভবনের নিচতলায় তার শ্রেণিকক্ষ ছিল ১০১ নম্বর কক্ষে। কক্ষটি যেখানে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয় সেই সিঁড়ি সংলগ্ন জায়গা থেকে ডান দিকে একদম শেষ প্রান্তে। আর কোচিং হয় ১০৯ নম্বর কক্ষে। কক্ষটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গা থেকে বামে দুটি কক্ষের পরে। স্পেশাল বৃত্তি ব্যাচে তার গ্রুপের পাঁচজন শিক্ষার্থী পড়ে। পঞ্চম শ্রেণির অন্য আরও তিনটি গ্রুপ থেকে ১৫-১৬ জনসহ মোট ২০-২২ জন। তারা একসঙ্গে স্পেশাল বৃত্তি ব্যাচের ক্লাস করে। সেসহ কয়েকজন ব্যাগপত্র রেখে বইমেলায় গেলেও, কোচিংয়ের অন্য অনেকেই হয়তো তখন রুমে ছিল।
আকাফ জানায়, আমি বইমেলায় ছিলাম। তখন খুবই জোরে বিকট একটা শব্দ শুনতে পাই। বাইরে আইসা দেখি, আমাদের ভবনের সিঁড়ির জায়গায় অনেক আগুন। আশেপাশেও আগুন আর ধোয়া ছড়িয়ে গেছে।
সে আরও জানায়, দুই পাশে আর দোতলার অনেক শিক্ষার্থীদের শিক্ষকরা পেছন দিক দিয়ে বাইরে বের করে আনেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভানোর কাজ করেন।
আকাফ বলে, আমি ওই সময়টাতে বইমেলায় বই কিনতে গিয়েছিলাম। নাহলে আমিও ভেতরেই থাকতাম। তখন আমারও ক্ষতি হতে পারতো। বই কিনতে গিয়ে হয়তো বেঁচে গেলাম। কারণ চোখের সামনে অনেককে আগুনে পুড়তে দেখেছি।
কোচিং গ্রুপে ব্যাগ নিতে আসার জন্য বললেও আকাফ ও তার মা রীনা স্কুল প্রাঙ্গণের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। কারণ আকাফের কোচিংয়ে যিনি শিক্ষক, ব্যাগটি তার জিম্মায় রয়েছে। আর ওই শিক্ষক আজ ক্লাসে আসেননি।
চলে যাওয়ার সময় আকাফের মা রীনা নাসরিন বলেন, ব্যাগ পেলে পেলাম, না পেলে না পেলাম। আমার ছেলেটাকে সুস্থভাবে পেয়েছি, এর চাইতে বড় পাওয়া আর নাই।
এর আগে সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফাইটার বিমান, যেটা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ব্যবহার হচ্ছিল, হঠাৎ এসে আছড়ে পড়ে মাইলস্টোনের শ্রেণিকক্ষে। মুহূর্তেই বিস্ফোরণে সব তছনছ হয়ে যায়। এ ঘটনায় মারা যায় ৩১ জন। আহত হয় ১৬৪ জন, যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকের শরীর ৯০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) পালিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় শোক। স্থগিত করা হয়েছে দুটি বিষয়ের এইচএসসি পরীক্ষা।
এমএমআই/এএটি