ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৩ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

শিক্ষিকা মেহেরীন জীবনকে তুচ্ছ করে শিশুদের উদ্ধার করছিলেন: স্কুলের স্টাফ শহিদুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:২৭, জুলাই ২৬, ২০২৫
শিক্ষিকা মেহেরীন জীবনকে তুচ্ছ করে শিশুদের উদ্ধার করছিলেন: স্কুলের স্টাফ শহিদুল মাইলস্টোন স্কুলের স্টাফ শহিদুল

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন লেগে গেলে শ্রেণিকক্ষে ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তখন শিক্ষিকা  মেহেরীন চৌধুরী (৪৬) শিশুদের ভেতর থেকে বাইরে বের করে দিচ্ছিলেন।

আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ক্লাসরুমে শিশু শিক্ষার্থীদের যখন বেঞ্চ থেকে ওঠানো হচ্ছিল, অনেকের পেটের নিচের অংশ থেকে নাড়িও বের হয়ে গিয়েছিল; কোমর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থা হয়েছিল।

শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ট্রেনিং বিমান বিধ্বস্ত স্থানে দাঁড়িয়ে সেদিনের উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া স্কুলের স্টাফ শহিদুল ইসলাম উদ্ধার কাজের বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

শহিদুল বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ১টা ১৮ মিনিটে আসে সেনাবাহিনী। আরও ৬ মিনিট পর আসে ফায়ার সার্ভিসের লোক। ততক্ষণে বিমান জ্বলছিল। পুরোপুরি আগুন নেভাতে প্রায় ৩০ মিনিট লেগে যায়। একই সময়ে শিশুদের উদ্ধারে পেছনের জানালা ভেঙে শিশুদের বের করার চেষ্টা হচ্ছিল।

বিমানটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষের পাঁচ-ছয় মিটার দূরে সড়কের ওপর আঁচড়ে পড়ে ছেঁচড়ে (স্লিপ করে) ক্লাসের নিচে গিয়ে জ্বলতে থাকে। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় ক্লাসে ঢোকার সব দরজা। আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে শিশুদের কাছে পৌঁছাতে প্রায় ৪৫ মিনিট লেগে যায়।

এ সময় শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করার একমাত্র উদ্ধারকারী ছিলেন ক্লাসে অবস্থানরত শিক্ষিকা (কো-অর্ডিনেটর) মেহেরীন চৌধুরী। তিনি নিজে বাঁচার চেষ্টা না করে আগুনকে পাশ কাটিয়ে শিশুদের বাইরে বের করে দিচ্ছিলেন।

একজন মা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে জীবন দিয়ে সন্তানের জীবন বাঁচায়। আমাদের স্কুলের ম্যাডাম অভিভূত হয়েছিলেন সকল শিশুর মা হিসেবে। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে শিশুদের উদ্ধার করছিলেন জানান শহিদুল।

তিনি বলেন, আগুন এমনভাবে জ্বলছিল, মনে হচ্ছিল বিধ্বস্ত বিমান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাতাসও পুড়ছে। বোঝা যাচ্ছিল না, আগুন বিমানের কোন অংশে জ্বলছে, আর কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অবস্থায় স্কুলের চারদিকে কয়েকশ’ শিক্ষক-স্টাফ-শিক্ষার্থী থাকলেও শিশুদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। মেহেরুন একা নিজে পুড়ে ভেতর থেকে শিশুদের বাইরে বের করে দিচ্ছিলেন।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ও পেছনের জানালা কেটে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন সেনাবাহিনী, স্কুলের স্টাফ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন।

শহিদুল জানান, শ্রেণিকক্ষ থেকে শিশুদের বের করার সময় দেখা যায়, বিমান বিধ্বস্ত স্থানের ওপরের ক্লাসের শিশুরা এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, তাদের কয়েকজনকে শরীরের উপরের অংশ ধরে তুলতেই নিচ থেকে নাড়ি বের হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা দেখে তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই বমি করে ফেলেন। তখনও সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্কুলের শিক্ষক-স্টাফরা উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক‍্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ২১ জুলাই দুপুরে বিধ্বস্ত হয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক স্থানীয়দের সহায়তায় বিভিন্ন বাহিনী উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। রাত পর্যন্ত চলে অভিযান। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতেই ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে বিমানটির পাইলট তৌকির ইসলামও ছিলেন।

ওই দুর্ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়।

জেডএ/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।