ঢাকা: গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. রেজাউল করিম অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)- এর প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি ফরাসি ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় উভয় পক্ষ সন্ত্রাসবাদ দমনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।
মো. রেজাউল করিম প্রতিনিধিদলকে আন্তরিক স্বাগত জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাস দমন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যেখানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মাহফুজুল আলম রাসেল বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।
নবনিযুক্ত এটিইউ প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণের পর একইদিন এটিইউ সদর দপ্তরে সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে ফরাসি দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দুপুরে পর্যন্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ফরাসি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ফরাসি দূতাবাসের ডেপুটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাটাশে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ক্রিস্টেল ফন্টেইন।
আরও উপস্থিত ছিলেন ফরাসি দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মিস্টার ফ্রেডেরিক ইনজা। এছাড়া, এটিইউর বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার শুরুতে এটিইউ’র সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করা হয়। এ সময় ফরাসি প্রতিনিধিদল সন্ত্রাসবাদ দমনে এটিইউ’র কর্মকৌশলের প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে সাগ্রহে জানতে চান। হোলি আর্টিজান ঘটনার পর বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়নি বলে এ সময় তাদের জানানো হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং উচ্চপর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে সন্ত্রাসবাদ দমন কার্যক্রম পরিচালনা, দেশ ও বিদেশ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্তি, নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রাখা, ইন্টারনেট ফোরাম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং পাবলিক ডেটাবেস পর্যবেক্ষণের জন্য ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টুলস ব্যবহার, জনবল বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে অবহিত করা হয়।
বৈঠকে উভয় পক্ষই সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং তথ্য বিনিময় অব্যাহত রাখার বিষয়ে একমত হন।
একইদিনে এটিইউ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপির কার্যালয়ে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এটিইউ প্রধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমনে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাজ্য প্রতিনিধিদলে ছিলেন মিজ সাকিনা আলম, ডেপুটি হেড, কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট, ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস এবং মিস্টার মুলিন। এছাড়াও, এটিইউ’র বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘শুন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি অনুসরণের বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে অবহিত করা হয়। অন্যদিকে এটিইউ’র বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উভয় পক্ষই নিজ নিজ দেশের অভিজ্ঞতা ও কৌশল বিনিময়ের পাশাপাশি পারস্পরিক সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় অব্যাহত রাখার বিষয়ে ঐক্যমত প্রকাশ করেন।
মো. রেজাউল করিম ১৫তম বিসিএস—এ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ১৫ নভেম্বর, ১৯৯৫ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বিভিন্ন পদে বগুড়া, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, ঝিনাইদহ জেলা, কেএমপি, হাইওয়ে পুলিশ, সিআইডি, এসবি, পিটিসি নোয়াখালী, আরআরএফ ঢাকা, এটিইউ এবং সর্বশেষ সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সততা, মেধা ও দক্ষতার সঙ্গে স্বীয় দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি স্বরূপ পিপিএম পদক এবং দুই বার আইজিপি ব্যাজ প্রাপ্ত হন।
রেজাউল করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পেশাগত উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে লাইবেরিয়া ও পূর্ব তিমুর—এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। রেজাউল করিম কুষ্টিয়া জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের কৃতি সন্তান। যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এটিইউ’র সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের ভবিষ্যতে আরও দক্ষ, যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে নির্দেশনা দেন।
এজেডএস/আরআইএস