ঢাকা: অসহনীয় যানজট মোকাবেলায় রাজধানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) দ্বিতল ও আর্টিকুলেটেড বাস বেশি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও তার অনেকগুলোই এখন বিকল। আর যে’কটি সচল আছে প্রয়োজনের সময় তাও মেলে না বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে অফিস শুরু এবং শেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও বিআরটিসি বাসের দেখা পান না যাত্রীরা। তারপরও ডিপোতে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা বাস নামে না সড়কে।
ছোট-বড়, দ্বিতল এবং আর্টিকুলেটেড মিলে বিআরটিসি’র বহরে বাস আছে ১৫৩২টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৬টি বাস চলমান আছে বলে জানায় সংস্থাটি। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের চলতি ও আগের মেয়াদে বিভিন্ন ধরনের ৯৫৮টি নতুন বাস সংযোজিত হয়েছে।
ছোট বাসের চেয়ে দ্বিতল ও আর্টিকুলেডেট বাস বেশি যাত্রী বহনে সক্ষম। এজন্য এসব বাস বেশি চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা নগরে বিআরটিসি’র নগর সার্ভিস হিসেবে বর্তমানে ৪১টি রুটে ৯৫টি একতলা, ২৭১টি দ্বিতল, ৪৮টি আর্টিকুলেটেড এবং ৪৩টি একতলা এসি বাসসহ মোট ৪৫৭টি বাস চলে।
বিআরটিসি ডিপো সূত্র জানায়, সবগুলো বাস রাস্তায় নামানো হয় না। মতিঝিল থেকে উত্তরা সড়কে যে ৪৩টি একতলা এসি বাস চলার কথা, সেখানে দিনে মাত্র ২৫টির মতো বাস চলে। বাকি ১৮টি বাস ডিপোবন্দি হয়ে পড়ে থাকে।
প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এ সড়কে বাস কোনো সময়ই খালি যায় না। অনেক যাত্রী একটু আরামে যেতে এ বাসের জন্য মতিঝিল, শাহবাগ ও ফার্মগেট কাউন্টারে দীঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন।
জনগণের চাহিদা ও যানজট নিরসন এবং আরামদায়ক উন্নত যাত্রী সেবার প্রদানের লক্ষ্যে ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের আওতায় ৫০০টি ট্রাক, ৩০০টি দ্বিতল, ১০০টি আর্টিকুলেডেট, ২০০টি একতলা এসি ও ১০০টি একতলা নন এসি বাস সংগ্রহের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বিআরটিসি। তবে এতে অগ্রগতি নেই অনেকদিন ধরে। এক বছর থেকে ফাইলবন্দি বাস কেনার প্রস্তাবটি।
খোদ বিআরটিসি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, নতুন বাস কেনার প্রস্তাবটি শুধুমাত্র ড্রাফট আকারেই আছে। তাই খুব শিগগিরই বিআরটিসি বহর বাড়বে না।
মিজানুর রহমান আরও জানান, ড্রাফট অনুমোদন হলে সেটি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। এরপর বিআরটিসি প্রকল্প তৈরি করবে। সেটি একনেকে অনুমোদনের পর দরপত্র দিয়ে বাস কেনা শুরু হবে।
তবে এ প্রক্রিয়াটি এখনও অনেক দূর বলে মনে করেন মিজানুর রহমান।
বিআরটিসি’র তথ্যে দেখা গেছে, সারা দেশে ৪২৭টি রুটে বাস চালায় সরকারি এ পরিবহন সংস্থা। এর মধ্যে ঢাকার ভেতরে চলমান রুট ৩৭টি, স্টাফ বাস রুট ১৬২টি আর ঢাকার বাইরে ১৮০টি রুটে বাস চালায় বিআরটিসি। এছাড়াও ৮৮টি অশোক লেল্যান্ড এসি বাস ৪৮টি রুটে পরিচালিত হচ্ছে।
বিআরটিসি’র মতিঝিল প্রধান কার্যালয়ের হিসেবে দেখা গেছে, দেশের ১৮০টি রুটে বিআরটিসি’র সার্ভিস নেটওয়াক রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি রুটে বিআরটিসি’র ৮৮টি নতুন এসি বাস এবং দেশের প্রধান প্রধান শহর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সঙ্গে ১৩২টি রুটে ৩৩১টি বাস চলাচল করছে।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটে কর্মজীবী মহিলাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বর্তমানে বিআরটিসি’র ১৫টি বাস ১২টি রুটে মহিলা বাস সার্ভিস হিসেবে চলাচল করছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য ২৬টি স্কুলে বিআরটিসি’র ২টি স্কুল বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী অনুদান হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৬টি বাস প্রদান করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি বাস স্বল্প ভাড়ায় প্রদান করা হয়েছে।
সচিবালয় এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে যাতায়াতের সুবিধার জন্য বর্তমানে ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ১৬২টি রুটে ২৩৯টি বাস স্টাফ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
দিনে দিনে বিআরটিসি’র বহর বিশাল হলেও সেবার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন রুটের তাদের বাসের সিট ভাঙ্গা, পাখা চলে না, অপরিষ্কার ও নোংরা অবস্থায় চলাচলরত অবস্থা নজরে এসেছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর।
নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও সরাসরি ধরেছেন মন্ত্রী।
সম্প্রতি মন্ত্রী এ নিয়ে বিআরটিসি ভবনে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলে বাস পরিষ্কার করা ও অতিরিক্ত ভাড়া নেবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন ডিপো ম্যানেজাররা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫
এসএ/এএসআর
** বিআরটিসি-৪: বাস এনালগ, এসি গরম
** বিআরটিসি-৩: নষ্ট হচ্ছে শতকোটি টাকার জাপানি বাস মেরামত প্রযুক্তি
** বিআরটিসি-২: সড়কে সংকট, ডিপোতে জঞ্জাল!
** বিআরটিসি-১: কোটি টাকার ২৩ ভলভো ভাগাড়ে!