সাতক্ষীরা: দলীয় মনোনয়ন চেয়ে একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে নাম পাঠানো হয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের। কিন্তু মনোনয়ন পেলেন সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন।
একক প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের নাম পাঠানোর খবর শুনে যেমন সবাই হতবাক হয়েছিলেন, তেমনি সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের মনোনয়ন প্রাপ্তির খবরেও হতবাক হয়েছেন পৌরসভাবাসী।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করা ছয়জনের মধ্যে নাম ছিল না নজরুল ইসলামের। তিনি নিজেও পৌর নির্বাচনে দাঁড়াতে রাজি ছিলেন না। কখনও প্রচার-প্রচারণাও চালাননি।
সবসময় গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি পৌর নির্বাচন করবেন না। অথচ বিশেষ কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের নাম জোর করেই কেন্দ্রে পাঠানো হয় মনোনয়ন চেয়ে।
দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে জনশ্রুতি আছে- শেখ হাসিনার আস্থাভাজন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে পরবর্তীতে জেলা পরিষদের প্রশাসক করা হতে পারে।
একইভাবে জনশ্রুতি আছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসনে দলীয় প্রার্থী হবেন নজরুল ইসলাম। তাই সংশ্লিষ্টরা নিজেদের পথ পরিস্কার রাখতেই পৌর নির্বাচনে দাঁড়াতে আগ্রহীদের বাদ দিয়ে নজরুল ইসলামের নাম কেন্দ্রে পাঠান।
কিন্তু ১ ডিসেম্বর রাতে খবর ছড়িয়ে পড়ে সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন। আর এতেই বদলে যেতে শুরু করেছে গোটা নির্বাচনী সমীকরণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তাজকিন আহমেদ চিশতি ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন নিজ নিজ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
এছাড়া মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন- জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু ও জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা।
স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নাম জোর করে কেন্দ্রে পাঠানো এবং তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগেরই ক্ষতি হয়েছে। এতে ইতোমধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মতের অমিল দেখা দিয়েছে।
আবার দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকা জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থেকে যান, সেক্ষেত্রে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তাজকিন আহমেদ চিশতির পক্ষে বিজয় অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।
তবে, এসব জটিলতা থেকে দূরে রয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। এই সুযোগ তিনি কতটা কাজে লাগাতে পারবেন, সেটার উপরেই নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফল।
আর দলীয় প্রতীক না পাওয়ায় জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদার নির্বাচনে অংশগ্রহণ তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। যদিও ভোটারদের কথা ভিন্ন। তারা দল নয়, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চান।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এমএ কাদের বাংলানিউজকে বলেন, এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় সবাই মুখ চেনা। তাই দল নয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেব। যিনি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবেন ভোট তারই প্রাপ্য।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৈয়দ সাদিক বাংলানিউজকে বলেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হলে ভোট কাকে দেব- সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তবে, অবশ্যই দল দেখে নয়, ব্যক্তি যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেব।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষেই আমরা কাজ করবো। আমাদের প্রতীক নৌকা। নৌকার বাইরে তো কিছু চিন্তা করতে পারি না।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তাজকিন আহমেদ চিশতি বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে ভোটাররা অবাধে ভোট দিতে পারলে ধানের শীষই বিজয়ী হবে।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী শেখ আজহার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা পৌর এলাকা জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংক। আমরা ভালো অবস্থানে আছি।
জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি। যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সব দলের মানুষ আমাকে সমর্থন করছে। আমি বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
পিসি/