ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ঢাবির পুকুর

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৫
অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ঢাবির পুকুর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: রাজধানী ঢাকায় সচরাচর পুকুর দেখা না গেলেও  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই রয়েছে পাঁচটি মিঠা পানির পুকুর। কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় দু’টি পুকুর পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে।

বাকি তিনটিও ক্রমশ হয়ে পড়ছে ব্যবহারের অনুপযোগী।

তবে সেদিকে খুব একটা খেয়াল নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। পুকুরগুলো সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করার ক্ষেত্রে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের কোনো পানির সঙ্কট হলে পুকুরগুলো বেশ উপকারে আসবে বলে স্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষও। কিন্তু মিঠাপানি সংরক্ষণের এ বিরল সুযোগকেও কাজে লাগাতে পারছেন না তারা।

ক্যাম্পাসের পাঁচটি পুকুরের মধ্যে জহুরুল হক হল, শহীদুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের ভেতরে রয়েছে একটি করে। একটি চারুকলা অনুষদে এবং অন্যটি রয়েছে বঙ্গবন্ধু হল ও জসীম উদ্‌দীন হলের মাঝামাঝি।

এর মধ্যে প্রথম তিনটি পুকুরে পানি থাকলেও তা গোসল ও ধোয়া-মোছা ছাড়া পানি পান ও নিত্য ব্যবহারের অনুপযোগী। চারুকলা ও বঙ্গবন্ধু হলের পুকুরে পানি একদমই নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সর্বাধিক গভীরতা সম্পন্ন চারুকলা অনুষদের বৃত্তাকার পুকুরটি পুরোপুরি শুকনো। পুকুরের চারদিকে বিভিন্ন গাছপালা ও লতাপতায় ঘেরা। পুকুরের মাঝখানেও রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় গাছ।

তবে পুকুরটিতে এক সময় পানি ছিলো বলে জানালেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, জয়নুল আবেদিন স্যারের সময় এ পুকুরে পানি ছিলো। এরপর এটিকে আরও গভীর করার জন্য খনন করা হয়। খনন করার পর থেকেই পুকুরে আর পানি থাকছে না।

বঙ্গবন্ধু হলের পুকুরটিতে ঘাস ও লতাপাতা এমনভাবে ঘিরে রয়েছে, দেখে বোঝার উপায় নেই এটি পুকুর না ঘাসের খেত। শেষ কবে পুকুরটির সংস্কার হয়েছিলো জানা নেই কারও। তথ্য নেই হল কর্তৃপক্ষের কাছেও।

দুই হলের মাঝামাঝি আয়তাকার এ পুকুরটিকে বর্তমানে ময়লা ফেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে শিগগিরই পুকুর সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বাংলানিউজকে জানান বঙ্গবন্ধু হলের সদ্য নিযুক্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান।

শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, হলের পুকুরে পানি থাকে সারা বছরই। তবে এ পানি ব্যবহারের উপযোগী নয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুরের চারপাশ থেকেই ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা, বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা কিছু। পুকুর পাড়ের আগাছা পরিষ্কার করে ফেলা হচ্ছে পুকুরের পানিতেই। দক্ষিণ-পুর্ব পাড়ে ময়লা জমে জমে ডাস্টবিনের রূপ নিয়েছে। পচা পানির দুর্গন্ধও পাওয়া গেলো।

ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক সময় পড়ার টেবিলে বসেও নাকে আসে পচা পানির দুর্গন্ধ। ফলে জানালা বন্ধ করে পড়তে বাধ্য হতে হয়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় সাঁতার জানা সত্বেও ওই পুকুরের পানিতে ডুবে শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়।

পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের অভাবের ফলেই এমনটি হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু তারপরও দৃষ্টিনন্দন এ আয়তকার পুকুরটির কার্যকর সংস্কার বা পানি পরীক্ষার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পুকুরের একাধিক বাঁধানো ঘাটের পাশে ‘সাঁতার কাটা নিষেধ’ নোটিশ টাঙিয়েই দায় সেরেছে।

জগন্নাথ হলের বর্গাকার পুকুরটিতে পানি থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী।

শিক্ষার্থীরা জানান, বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই পুকুর পাড় দিয়ে হাঁটতে হলে পচা পানির গন্ধে নাক বন্ধ করতে হয়।

তুলনামূলকভাবে ভালো রয়েছে জহুরুল হক হলের পুকুরটির পানি। সেখানে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত গোসলসহ ধোয়া-মোছার কাজ করতে পারলেও পানি পান ও নিত্য ব্যবহারের অনুপযোগী।

পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলেই স্বাভাবিকভাবে কোনো পুকুরে পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই পুকুরের নিচের স্তরে কাদামাটির শক্ত প্রলেপ তৈরি করতে হবে। তবেই পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব।

পানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীর যে জলাশয়গুলোতে পানি রয়েছে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে পলিমাটি জড়ো হয়ে কাদামাটির শক্ত স্তর তৈরি হয়েছে। ফলে সেখানে পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঢাকায় পানির স্তর এতোটাই নেমে গেছে, স্বাভাবিকভাবে সেখানে পানি দেওয়া হলেও তা ভূ-গর্ভে চলে যাবে। তাই কাদামাটির স্তর তৈরি ছাড়া পানি সংরক্ষণ অসম্ভব।

তবে নিজস্ব উদ্যোগে পানি সংরক্ষণ করার এ ব্যবস্থা নিতে চান না চারুকলার ডিন। তিনি প্রকৃতির ওপরই নির্ভর করতে চান।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পুকুর পাড়ের কোনো গাছ কাটছি না। যেন একসময় এগুলোর পাতা পচে ও পলি জড়ো হয়ে কাদামাটির স্তর শক্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসে পানির সঙ্কট হলে পুকুরগুলোকেই বিকল্প উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তাই ক্যাম্পাসের পুকুরগুলো সংস্কারের চিন্তা কর্তৃপক্ষের রয়েছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
এসএ/এসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।