ঢাকা: ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসকিম এ খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকা ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পে ‘দুর্নীতির বিষয়ে দুদকের করণীয় না থাকায়’ কমিশন তাকে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে মন্ত্রণালয়কে এ অনুরোধ করেছে।
সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নথিভুক্তির (অব্যাহতি) মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত এক আদেশপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আদেশপত্রে ওয়াসার এমডি তাসকিম এ খানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ করা হয়। একইসঙ্গে প্রকল্পের বিষয়ে ‘দুদকের কিছু করণীয় না থাকায়’ নথিভুক্তির মাধ্যমে অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। বাংলানিউজের কাছে আদেশের একটি কপি রয়েছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ওয়াসার এমডি দীর্ঘদিন ধরে দুদকের দায়মুক্তি পেতে চেষ্টা করে আসছিলেন। একপর্যায়ে শর্ত সাপেক্ষে তাকে দায়মুক্তি দেয় কমিশন।
পদ্মা জশলদিয়া ঢাকা ওয়াসার চলমান একটি প্রকল্প। তাকসিমের বিরুদ্ধে ওয়াসার এ প্রকল্পে সরকারের কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের কাছে আসা অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, ঢাকা ওয়াসার বর্তমান এমডি’র হস্তক্ষেপে বিনা টেন্ডারে ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং পরামর্শক নিয়োগের আগেই তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের পাইপ আমদানি করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের ১৩ মাস আগেই ঢাকা ওয়াসা ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করে। কাজের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়নি, ভেটিং (দরকষাকষি) হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। প্রকল্পটির কাজ চলমান থেকে শেষ হলে সরকারের কমপক্ষে পাঁচশ’ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ভেটিংয়ের সুযোগ থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তা না করায় কমপক্ষে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। এছাড়া, জমি অধিগ্রহণের আগেই বিদেশ থেকে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী (পাইপ) আমদানির জন্য ব্যয় হয়ে যাওয়া টাকার ওপর অতিরিক্ত সুদ গুণতে হবে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। সব মিলে সরকারের বড় অংকের টাকার ক্ষতির পাশাপাশি কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ঢাকা ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পের শুরুর দিকে থাকা একজন কর্মকর্তা এর আগে বাংলানিউজকে বলেছিলেন, কোনো রকম নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের পাইপ আমদানি করা হয়েছে। এতে সরকারের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করে নতুনভাবে শুরু না করলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ঘরেই চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। তবে এসব অভিযোগ তিনি বরাবরই অস্বীকার করে বলেছেন, একটি চক্র তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এসব করছে। ওয়াসার বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে গত ২ মার্চ সংসদীয় কমিটিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কমিটির বৈঠকে ওয়াসার দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
এডিএ/এইচএ/