পঞ্চগড়: প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১১ বছর পার হলেও এখনো শূন্য রয়ে গেছে পঞ্চগড় বিসিক শিল্পনগরী। দীর্ঘ এ সময়ে গড়ে ওঠেনি উল্লেখযোগ্য শিল্প-কারখানা।
শিল্প-কারখানার জন্য নির্ধারিত বিস্তীর্ণ এলাকা এখন পরিণত হয়েছে গো-চারণ ভূমি আর স্থানীয়দের খেলার মাঠে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্তঘেঁষা ও শিল্প-কারখানার জন্য বিপুল সম্ভাবনাময় পঞ্চগড়ে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের আওতায় স্থাপিত হয় বিসিক শিল্প সহায়ক কেন্দ্র।
এরপর ২০০৪ সালে ডিসেম্বরে পঞ্চগড়ের শিল্প সম্ভাবনা বিকাশের লক্ষ্যে জেলা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে পঞ্চগড় সুগার মিলস লিমিটেড সংলগ্ন এলাকায় ১৫ একর জমির উপর ৩টি ক্যাটাগরিতে শিল্প ইউনিট করার লক্ষে ৯৬টি প্লট নিয়ে গড়ে উঠে পঞ্চগড় বিসিক শিল্প নগরী।
এখানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, পর্যাপ্ত পানি ও ড্রেনেজ সুবিধাসহ পরিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শিল্প নগরীর দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনায় জন্য নেই কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
জনবলের অভাবে স্থানীয় ও বাইরের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগ রক্ষা করতে না পাড়ায় শিল্প নগরীটি এখনো কার্যকর শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি।
বর্তমানে এই শিল্প নগরীর দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২টি কর্মকর্তার পদ, ১টি পিয়ন ও ১টি নৈশ প্রহরীর পদ থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি কাউকেই।
শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের ২ জন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শিল্প নগরীর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়াও শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের নৈশ প্রহরীকে শিল্প নগরীর নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, শিল্প সহায়ক কেন্দ্রে ৪টি কর্মকর্তার পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ২ জ। এছাড়া পিয়ন ও নৈশ প্রহরী ২টি পদের মধ্যে শুধু নৈশ প্রহরী রয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শিল্প নগরীর ৯৬টি প্লটের মধ্যে বর্তমানে সাড়ে ৩০টি প্লটে ৭টি শিল্প ইউনিট চালু ও ৫টি নির্মাণাধীন রয়েছে। বরাদ্দের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে ৩টি শিল্প ইউনিটের জন্য ২২টি প্লট।
এরআগে বরাদ্দকৃত ৭টি শিল্প ইউনিটের জন্য সাড়ে ১৩টি প্লট মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গত বছরের জুন মাসে তা বাতিল হয়ে যায়।
এছাড়া বরাদ্দের অপেক্ষা, বাতিল হয়ে যাওয়া ও ফাঁকা পড়ে থাকা মোট সাড়ে ৬৫টি প্লট এখনো অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকায় পরিণত হয়েছে গো-চারণ ভূমি ও স্থানীয়দের খেলার মাঠে।
চালু হওয়া ৭টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে রয়েছে, কোল্ড স্টোরেজ, বিস্কুট কারখানা, মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, স্যানিটারি (রিং-স্লাব) সামগ্রী তৈরির কারখানা, আসবাবপত্র তৈরি কারখানা, ওয়েল মিল ও তিল প্রসেসিং কারখানা।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ইকবাল কায়সার মিন্টু বাংলানিউজকে জানান, পঞ্চগড় বিসিক শিল্প নগরীতে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য স্থানীয় উদ্যোক্তা অবশ্যই রয়েছেন। কিন্তু শিল্প নগরী স্থাপনের সময় প্রতি একর জমির মূল্য ১৬ লাখ টাকা নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে তা বৃদ্ধি করে ৬০ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া পঞ্চগড়ে পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণের সুবিধা না থাকা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকার কারণে স্থানীয় উদ্যোক্তারা শিল্প-কারখানা স্থাপনে অনীহা দেখাচ্ছেন।
পঞ্চগড় বিসিক শিল্প নগরীর দায়িত্বে থাকা জেলা শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের উপ ব্যবস্থাপক মো. জোহুরুল হক বাংলানিউজকে জানান, শিল্প নগরীটিকে পরিপূর্ণ শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে পঞ্চগড়ের এই শিল্প নগরী পরিপূর্ণ শিল্প নগরীতে পরিণত হবে।
সম্ভাবনাময় পঞ্চগড় জেলার এই বৃহৎ শিল্প নগরীটি পরিপূর্ণ শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে উঠলে জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে প্রত্যাশা পঞ্চগড়বাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
এসআর