ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১১ কার্যদিবসে শেষ হচ্ছে নিজামীর আপিল মামলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৫
১১ কার্যদিবসে শেষ হচ্ছে নিজামীর আপিল মামলা মতিউর রহমান নিজামী

ঢাকা: ১১ কার্যদিবসে শেষ হতে পারে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিল মামলার বিচারিক কার্যক্রম।
 
মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মঙ্গলবার (০৮ ডিসেম্বর) আসামিপক্ষ তার জবাব দেবেন।

আর এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম।
 
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আগামীকাল (মঙ্গলবার) তারা জবাব দেবেন। এরপর আদালত হয়তো রায় ঘোষণার দিন ধার্য করতে পারেন।
 
রাষ্ট্রপক্ষে আর কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর কোনো সুযোগ নেই।
 
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে এ মামলার শুনানি চলছে। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় আপিল মামলাটি ১ নম্বরে রয়েছে।
 
যে চারটি হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে নিজামীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে যেন সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে সর্বোচ্চ আদালতে এর সপক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেছেন বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বিশেষ করে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সীমাহীন অপরাধ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তিই এ অপরাধের একমাত্র সাজা। ফাঁসি ছাড়া এর অন্য কোনো বিকল্প নেই।

তবে আসামিপক্ষ বলছেন, অপরাধ সংঘটন হলেও নিজামী সে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। এরপরও কোনো অভিযোগে যদি আদালত দোষী সাব্যস্ত করেন, তাহলে তাকে যেন চরম দণ্ড দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে আদালতে আরজি জানানো হয়েছে।  

ট্রাইব্যুনাল থেকে আপিল বিভাগে আসা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫ জনের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।
 
এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ২১ নভেম্বর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
 
তবে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির দণ্ডের পরিববর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
 
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আনোয়ারুল হক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন নিজামীকে।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ২৩ নভেম্বর আপিল করেন নিজামী। ছয় হাজার ২শ’ ৫২ পৃষ্ঠার আপিলে মোট ১শ’ ৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছেন তিনি।

তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নিজামীর আপিলের সার-সংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের জন্য রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরপর উভয়পক্ষ সার-সংক্ষেপ জমা দেন।

এ আপিল মামলার শুনানি শুরু হয় গত ০৯ সেপ্টেম্বর থেকে। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায়সহ মামলার নথিপত্র উপস্থাপন শেষ করেন আসামিপক্ষ। আর গত বুধবার (০২ ডিসেম্বর) শুনানির নবম কার্যদিবসে আসামিপক্ষের তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করেন।

নিজামীর পক্ষে শুনানি করেন তার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এস এম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন।  

সোমবার (০৭ ডিসেম্বর) এক কার্যদিবসেই রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
 
নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
 
প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

৫ ও ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এগুলোও ছিল হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উস্কানি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
ইএস/এএসআর

** ‘ফাঁসিই বুদ্ধিজীবী হত্যার একমাত্র সাজা’
** রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ
** রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।