ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষে জামায়াতের সহযোগিতার বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মতিউর রহমান নিজামী দুধে ধোয়া নন।
মঙ্গলবার (০৮ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগে যুক্তিখণ্ডনের সময় এসব কথা বলেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে ১১তম কার্যদিবসে শেষ হলো আপিল মামলাটির শুনানি। আগামী ০৬ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আসামিপক্ষে যুক্তিখণ্ডন কালে খন্দকার মাহবুব বলেন, একাত্তরে জামায়াত নেতাদের কর্মকাণ্ড দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলো জামায়াত। আর নিজামী ওই দলের কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে পাকিস্তানের পক্ষ নেন। নিজামী দুধে ধোয়া নন।
খন্দকার মাহবুব বলেন, যা করেছেন প্রিন্সিপ্রাল অ্যাকিউজডরা করেছেন, অর্থাৎ পাকিস্তানিরা। নিজামী ছিলেন ২০ বছরের যুবক। তার কথা কি পাকিস্তানি সেনারা মানবে?
এর আগে গত ০২ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময়ও খন্দকার মাহবুব স্বীকার করেছেন একাত্তরে নৃশংস ঘটনার কথা। এসব অপরাধে তার মক্কেল জড়িত নন দাবি করেন তিনি। তারপরও আদালত যদি কোনো অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করেন তাহলে তাকে যেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া না হয়- সে আরজিও জানান তিনি।
আর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়টিকে দোষ স্বীকার হিসেবে দেখছেন।
নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
৫ ও ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এগুলোও ছিল হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উস্কানি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ।
** নিজামীর ফাঁসি বহাল থাকবে- আশা অ্যাটর্নি জেনারেলের
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮,২০১৫
ইএস/বিএস/এএসআর