বান্দরবান: পার্বত্য জেলা বান্দরবানে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ (পইংজ্রা) মেলা।
শহরের রাজবাড়ি মাঠে ওইদিন সকাল ১১টায় ১৭তম বোমাং রাজা ইঞ্জিনিয়ার উ চ প্রু চৌধুরী অস্থায়ী রাজমঞ্চে হেডম্যান কারবারী ও প্রজাদের কাছ থেকে রাজকীয় কায়দায় খাজনা আদায়ের মাধ্যমে দিয়ে মেলার উদ্বোধন করবেন।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈংসিং এমপি, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, খাজড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাই থই অং মার্মা, বান্দরবান জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এসময় হাতে স্বর্ণখচিত তলোয়াড় ও রাজকীয় পোশাকে রাজা উ চ প্রু মঞ্চে উঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রজারা দাঁড়িয়ে রাজাকে সম্মান জানানো হবে। সার্কেলের হেডম্যান, কারবারী, রোয়াজাগণ রাজাকে কুর্ণিশ করে জুম খাজনা ও উপঢৌকন দিয়ে থাকেন।
এবারের রাজপূণ্যাহ বোমাং সার্কেলের ১৭তম রাজা বোমাংগ্রী ইঞ্জিনিয়ার উ চ প্রু রাজা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার দ্বিতীয় রাজপূণ্যাহ।
রাজপরিবার সূত্রে জানা যায়, বোমাং সার্কেলের ১০৯টি মৌজার হেডম্যান কারবারীগণ দূর-দূরান্ত থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই রাজপূণ্যাহ্ উপলক্ষে বান্দরবানে এসে পৌঁছাবেন। তারা বাৎসরিক খাজনার পাশাপাশি নানা রকম উপঢৌকন দিবেন রাজা বাহাদুরকে।
তিনদিন ব্যাপী রাজপূণ্যাহ মেলায় প্রতিবারের মতো এবারও নানান বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সার্কাস, যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, মৃত্যুকুপসহ নানান আয়োজন। আনন্দঘন পরিবেশে শান্তিপূর্ণ ভাবে ঐতিহ্যবাহী রাজপূণ্যাহ মেলা আয়োজনের জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন রাজ পরিবারের সদস্যরা।
প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার জুমিয়া পরিবারের কাছ থেকে নব্বই হাজার টাকা খাজনা আদায় করা হয়। তন্মধ্যে ৪২ ভাগ রাজা, ২১ ভাগ হেডম্যান এবং ২৭ ভাগ রাজস্ব সরকার পেয়ে থাকে।
১৪টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায় এবং প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার ১০৯টি মৌজা নিয়ে গঠিত বোমাং সার্কেল। ১৭২৭ সাল থেকে বোমাং রাজ প্রথা শুরু হলেও ১৮৭৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বোমাং রাজারা ঐতিহ্যবাহী রাজপূণ্যাহ মেলার আয়োজন করে আসছেন।
বান্দরবানে প্রত্যেকটি মৌজার প্রতিটি পরিবার বছরে ৬ টাকা হারে খাজনা দেন। আর তা থেকে সরকারের তহবিলে জমা হয় ২.২৫ পয়সা, ১.২৫ পয়সা পান মৌজার হেডম্যানরা। বাকি ২.৫০ পয়সা পান বোমাং রাজা। ১৮৭৫ সালে নবম বোমাং রাজা সা নাইঞ্রো রাজকর আদায় উপলক্ষে প্রথম রাজপুণ্যাহ্ অনুষ্ঠানের প্রচলন করেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
এসএইচ