ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুদকের গণশুনানি

কান্না ও ক্ষোভে প্রতিকার চাইলেন ভূমি সেবা বঞ্চিতরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
কান্না ও ক্ষোভে প্রতিকার চাইলেন ভূমি সেবা বঞ্চিতরা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ভূমি ও সাব রেজিস্ট্রার অফিসে নজিরবিহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগই করলেন সরকারি সেবা বঞ্চিতরা। সংশ্লিষ্ট এসব অফিসের কর্মকর্তাদের সামনেই ভুক্তভোগীরা জানালেন অভিযোগ।

সেবা না পাওয়া এসব জনসাধারণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কারো কান্নায়।
 
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভূমি সেবা বঞ্চিতদের নিয়ে ‘গণশুনানি’র আয়োজন করে। এ আয়োজনে মঞ্চে ছিলেন সেবা না পাওয়া বঞ্চিত সাধারণ জনগণ আর সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তারা।

ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ছিলেন এ আয়োজনের সঞ্চালক।
 
আয়োজনটি দুদকের হলেও সংস্থাটির চেয়ারম্যান, কমিশনার, মহাপরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন দর্শক সারিতে। তারা শুনেছেন ভুক্তভোগী মানুষের কথা।
 
মঞ্চের বামপাশে ছিলেন ভুক্তভোগী ও সেবা বঞ্চিতরা। আর ডানপাশে ছিলেন সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তারা। মঞ্চের মাঝে ছিলেন জেলা প্রশাসক। অনুষ্ঠান চলাকালে দর্শক সারি থেকে অনেক ভুক্তভোগী মঞ্চে গিয়ে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন।
 
অনুষ্ঠানে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, কোনো সমস্যা নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা সহকারী রেজিস্ট্রার বা কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা কথা বলাতো দূরের কথা তাকাতেও চান না। অনেক কর্মচারীও এমন করেন। কোনো প্রশ্ন করলেও উত্তর দেন না। গণশুনানিতে তারা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে ভালো ব্যবহারের ফরিয়াদ করেন।
 
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক একজন ভুক্তভোগীর সমস্যা শুনে রোববার (১৩ ডিসেম্বর) গুলশানের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলে তিনি বলেন, ‘স্যার, তার সাক্ষাৎ পাওয়ার চাইতে ফেরেশতার সাক্ষাৎ পাওয়া অনেক সহজ, এর আগেও গিয়েছি, পাইনি। ’
 
এ কথার সূত্র ধরে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আসলে আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গেলো না। ’
 
অনুষ্ঠানে ভূমি ও সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষের নালিশ দেন ভুক্তভোগীরা। আরমানিটোলার মো. রাশেদ বলেন, ‘কোতোয়ালি ভূমি অফিসে নামজারি করতে গিয়ে ঘুষ দিতে হয়েছে। ঘুষ না দিলে নামজারি হবে না বলে জানানো হয়। ’ এসময় জেলা প্রশাসক তার নাম জানতে চান। রাশেদ ওই কর্মচারীর নাম বললে জেলা প্রশাসক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
 
ভুক্তভোগী মো. আলী মিয়া বলেন, ‘তেজগাঁও অফিসে নামজারি করতে গেলে ওখানকার স্টাফ বলেন, খরচাপাতির জন্য টাকা দিতে। ২০ হাজার চাইলে ১৫ হাজার দিই। বাধ্য করে টাকা নিয়েছেন। এরপর কাগজপত্রের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে আরও টাকা চান। ’
 
এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমা নাহার তাকে বলেন, সব তথ্য নিয়ে রোববার আসতে।
 
ষাটোর্ধ্ব গিয়াসউদ্দিন বলেন, গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আওতাধীন ধামালকোট মৌজায় ৫০ বছর ধরে আমি একখণ্ড জমির মালিক। হঠাৎ আমি খবর পেলাম গত ১ জুন কে বা কারা আমার জমিটির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিস্ট্রি করেছে। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম এ দলিল রেজিস্ট্রির জন্য ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করা হয়েছে ১৯ আগস্ট।

আমার প্রশ্ন, রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনো বৈধ কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় কি-না? আর রেজিস্ট্রি অফিসে বাকিতে রেজিস্ট্রেশন হয় কি-না?’
 
প্রবীণ এ মানুষটির প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে গুলশানের সাব-রেজিস্ট্রার কামাল হোসেন খান বলেন, ‘যদি ভুলবশত ফি কম নেওয়া হয় পরবর্তীতে সেটা জমা নেওয়া হয়। ’ প্রবীণ গিয়াসউদ্দিন পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘একেবারে ফি ছাড়াই ওই দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব?’ এ সময় ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। আগামী রোববার ওই অফিসে যেতে ভুক্তভোগী গিয়াসউদ্দিনকে অনুরোধ করেন।
 
সাখাওয়াত হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, ১০/১২ হাত পানির নিচে থাকা একটি জমি রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে গুলশানের সাব রেজিস্ট্রার সেটা করতে রাজি হননি। পরবর্তীতে ওই অফিসের এক কর্মচারীর মধ্যস্থতায় ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে।
 
এ অভিযোগ অস্বীকার করে ওই সাব রেজিস্ট্রার বলেন, ‘অভিযোগকারী ভূমির মালিক নন, মধ্যস্থতাকারী (দালাল)। ’
 
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের অনেকেরই আচরণগত সমস্যা রয়েছে। এসব বিষয়ে মনোযোগী হওয়া জরুরি।
 
বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের দুদকের উদ্যোগে ওই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় জনগণের মুখোমুখি হন রাজধানীর গুলশান, তেজগাঁও ও কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) এবং তেজগাঁও, গুলশান ও সূত্রাপুরের সাব রেজিস্ট্রাররা।
 
শুনানিতে ঢাকা জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ভূমি সংক্রান্ত দুর্নীতি দূর করা এবং নাগরিকদের সেবা পাওয়া সহজ করতে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
এডিএ/জেডএস

** সরকারি প্রতিটি সেক্টরে হবে দুদকের গণশুনানি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।