ঢাকা: বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে পাচার প্রক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার এক নাগরিক জড়িত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।
‘মি. জন’ নামে অস্ট্রেলিয়ার ওই নাগরিক মানবপাচারের একটি চক্রের মূলহোতা।
শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম ডিভিশনের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী।
চক্রটি শুধু বাংলাদেশ থেকে নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে মানবপাচার পরবর্তী ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে অর্থ-কড়ি হাতিয়ে নেয় বলেও জানান তিনি।
মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, বাংলাদেশি পাচারের একটি চক্রের মূলহোতা হলেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক মি. জন।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে মানব পাচারকারী ওই চক্রের তিন বাংলাদেশি সদস্যকে আটক করে সিআইডি। আটককৃতরা হলেন, আল আজাদ (২৭), ফিরোজ আহমেদ (২৮) ও কৃষ্ণ গোপাল দে (৩৮)।
অভিযানকালে আটকৃত কৃষ্ণ গোপাল দে’র শরীরে অ্যাংলেটের ভিতরে কৌশলে লুকিয়ে রাখা ১৫ লাখ টাকা জব্দ করেন সিআইডির সদস্যরা। রাজধানীর কোতোয়ালি থানা এলাকার তাঁতীবাজার, বনানী ও উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার চক্রের এসব সদস্যকে আটক করা হয়।
এই বিষয়ে সিআইডি কর্মকর্তা আরও বলেন, মূলহোতা মি. জন রুমানিয়ান বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। তিনি মূলত বাংলাদেশি ও ভারতীয় দালালদের মাধ্যমে ইন্টারনেটে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সাইটে বিদেশে চেইন শপে চাকরির অফার দিতেন। আকর্ষণীয় বেতনে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে চাকরি দেওয়া হবে এমন প্রতারণার ফাঁদ ফেলতো চক্রটি।
মানবপাচারের প্রতারক চক্রটি কাউসার আহমেদ নামে একজনকে নিউজিল্যান্ডে চাকরির দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যায়। পরে বিভিন্ন অজুহাতে তাকে নিউজিল্যান্ডে না পাঠিয়ে আরও ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এই প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগী কাউসারের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয় দেশি-বিদেশিদের সমন্বয়ে গঠিত এই প্রতারক চক্রটি। এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন মিজান নামে আরো এক বাংলাদেশি।
আটককৃত ৩ আসামির বিষয়ে বলতে গিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা জানান, কৃষ্ণ গোপাল দে ওই চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট। তিনি মূলত অর্থ লেন-দেনের কাজটি করতেন। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অস্ট্রেলিয়ায় টাকার চেক অর্ডার পাঠালে ধরা পড়তে পারেন এমন আশঙ্কায় গোপাল দে তার আপন ভাই গোপালের কাছে ভারতের কলকাতায় টাকা পাঠাতেন। কলকাতার গোপাল টাকাগুলো মুন্সী নামে এক ব্যক্তির কাছে চেক হস্তান্তর করতেন। পরে মুন্সী সেখান থেকে চেকগুলো অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত মি. জনের কাছে পাঠাতেন।
অন্য দুই আসামি আল আজাদ ও ফিরোজ আহমেদ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত লোকদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকিয়ায় যোগাযোগ করতেন। এই দুজনের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়ায়।
আটককৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি জানতে পারে, মি. জনের সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়ায় দুই বাংলাদেশি, দুই ইন্দোনেশীয় এবং দুই ভারতীয় নাগরিক অবস্থান করছেন।
মি. জন বাংলাদেশে বেশ কয়েক দফা এসেছিলেন। সর্বশেষ ৩ মাসে আগে বাংলাদেশে আসেন বলে তথ্য রয়েছে সিআইডির কাছে। মি. জনের ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
বিদেশে অবস্থনরত চক্রের অন্যান্য সদস্যদের যথাযথ আইনের আওতায় নিয়ে আসতে খুব শিগগিরই ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করবে সিআইডি।
চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরা থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ভুক্তভোগী কাউসার আহমেদ একটি মামলা (মামলা নং-১২) দায়ের করেছিলেন। ওই মামলায় আটককৃত ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫/আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা
এনএইচএফ/এমজেএফ/
** আন্তর্জাতিক ৩ মানবপাচারকারী আটক