ঢাকা: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকারের চিত্র ধীরে ধীরে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কিছু ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তির স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে এদেশে জরুরি আইন জারি করে ও সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সংবিধানের গতিধারাকে চরমভাবে ব্যাহত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চতুর্দশ জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) পাঠানো লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য পাঠ করে শোনান মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। মানবাধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য দেশের শাসন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবশ্যই নৈতিক এবং সামাজিক, মানবিক ও সহানুভূতিশীল মানসিকতা গ্রহণ করে দেশ ও জনগণের সেবা করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এদেশে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। দারিদ্র্যের বেড়াজালে আবদ্ধ এই বিশাল জনগোষ্ঠীর যে কোনো ব্যক্তির যখন কোনো আইনগত অধিকার ক্ষুন্ন হয় তখন প্রতিকার পাওয়ার জন্য তাকে আদালতের আশ্রয় নিতে হয়। এজন্য অধিকার বঞ্চিত নিরীহ-দরিদ্র মানুষকে আইনি সহযোগিতা দিতে সকল মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আমাদের অনেক অধিকার রয়েছে। কিন্তু যুগের চাহিদা অনুসারে দু’টি অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেটের অধিকারও মানবাধিকার। এটা লেটেস্ট পজিশন। সুতরাং ইন্টারনেট ব্যবহার করাটা মানবাধিকার। এটা না দিলে মানবাধিকার ক্ষুন্ন হবে। খাদ্যের অধিকারও মানবাধিকার। সুতরাং এই দুই অধিকার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। যা মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে সমাজকে আরও সভ্য করবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান।
সভাপতির বক্তব্যে নাজমুল হুদা বলেন, এক সময় আমিই বলেছি, দেশের সমস্যা সমাধানে ও সংকট নিরসনে দুই নেত্রী খালেদা জিয়া ও আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) একসঙ্গে বসতে। তবে এখন বলছি, সংলাপের বা আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী আপনি একাই দিতে পারেন এ দেশের সকল সমস্যার সকল সমাধান। আপনি একক সিদ্ধান্ত দেবেন এবং আপনিই একক কৃতিত্ব নেবেন। এ কৃতিত্ব শেয়ার করার মতো দ্বিতীয় কোনো যোগ্য ব্যক্তি নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত ক্ষমতার আধার আপনি। আপনি এদেশকে দিতে পারেন সঠিক দিক-নির্দেশনা। আপনিই পারবেন স্বৈরশাসনের বেড়াজাল ছিন্ন করে দেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
ইএস/এএসআর