ঢাকা: এতোদিনের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ পাচ্ছে। আশায় উদগ্রিব দক্ষিণবঙ্গের মানুষ মাত্র কয়েক মিনিটে পদ্মাপাড়ি দেওয়ার বাস্তব কর্মযজ্ঞ অবলোকন করছেন।
পদ্মাসেতুতে রেললাইন নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়াগত দিক নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাওয়া চায়না রেলওয়ে গ্রুপের (সিআরইসি) সঙ্গে আলোচনা শেষ পর্যায়ে। সে আলোচনার সিদ্ধান্ত- আগামী বছরের মার্চেই শুরু হচ্ছে পদ্মাসেতুর রেললাইন সংযোগের কাজ।
রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে জানান, মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তারা রেললাইন সংযোগের কাজটিও এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
তিনি জানান, আগামী মার্চেই শুরু হবে পদ্মাসেতুর রেললাইনের কাজ। যে কাজটি করবে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ। তিন বছর পর ২০১৮ সালে যেদিন পদ্মাসেতু খুলবে, সেদিনই ট্রেনও চলবে সেতু দিয়ে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় নেওয়া হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ের আওতায় আনার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু দিয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের এ পরিকল্পনা।
এর আওতায় রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছাড়া ট্রেন গেণ্ডারিয়া হয়ে ৪৪ কিলোমিটার দূরের মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত যাবে। সেখান থেকে সাড়ে ৬ কিলোমিটার পদ্মাসেতু দিয়ে যাবে অন্য প্রান্ত জাজিরায়। আর জাজিরা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত বসানো হবে ৩১ কিলোমিটার রেললাইন।
দ্বিতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ৭৯ কিলোমিটার রেলসংযোগ দেওয়া হবে। এদিকে কমলাপুর থেকে গেণ্ডারিয়া পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রেললাইন আগেই টানা আছে। আর গেণ্ডারিয়া থেকে টানা হবে বাকি ১৬২ কিলোমিটার লাইন। এর বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। স্থাপন করা হবে নতুন ৬টি রেলস্টেশন। এগুলো হলো- কেরাণীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা ও শিবচর।
তবে এ কাজ কবে শুরু হবে এতোদিন তা ঠিক করতে দফায় দফায় রেল ভবনে বৈঠক ও সমন্বয় কাজ করছিলো চায়না রেলওয়ে গ্রুপ, সেতু বিভাগ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়।
রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পদ্মাসেতুর রেললাইন সংযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ‘নেগোসিয়েশন’ চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আলোচনা-বৈঠকও শেষ পর্যায়ে।
তিন বছর পর ২০১৮ সালে যেদিন চালু হবে পদ্মাসেতু সেদিনেই ট্রেনও চলবে পদ্মাসেতুতে।
তিনি জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত কাজ হবে পরের ধাপে। ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন নির্মিত হয়ে গেছে। কিছুদিন পরে এখানে রেল চলাচল করবে।
আর ভাঙ্গা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ খুব অল্প সময়ে শেষ করা যাবে।
তবে মাওয়া থেকে ঢাকা আসার সংযোগ গড়তে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। তবে ছয়মাসের বেশি লাগবে না।
আর তিন বছরের মধ্যেই শেষ হবে পদ্মাসেতুতে রেলের সব কাজ। এবং নতুন বছরের (২০১৬) মার্চ থেকে শুরু হবে রেললাইনের কাজ- এমন দৃঢ় আশাবাদ জানান তিনি।
প্রকল্প অনুসারে, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রেলপথটি গেণ্ডারিয়া পেরিয়ে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী-১, ধলেশ্বরী-২, মূল ধলেশ্বরী— এ চার নদীর ওপর দিয়ে মাওয়ায় যাবে। মাওয়া থেকে পদ্মাসেতুর ওপর যে রেলপথ থাকবে সেটি হবে দ্বিতলরেল। মালবাহী এবং যাত্রীবাহী দুই ধরনের ট্রেনই চলবে পদ্মাসেতু দিয়ে।
পদ্মাসেতুর রেললাইনের কাজ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর দ্রুত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। মাত্র ৩-৪ ঘণ্টার এ পথে খুলনা থেকে ঢাকা আসা যাবে।
এখন বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় আসতে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেলপথ ঘুরে আসতে হয়। কিন্তু পদ্মাসেতুর রেলপথে এ দূরত্ব কমে মাত্র তিন-চার ঘন্টায় চলে আসবে বলেও রেলওয়ের তথ্যে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
এসএ/এএসআর