ঝালকাঠি: ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় তালিকাভুক্ত রাজাকার ছালাম মৃধার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ওই গ্রামের মানুষ। একের পর এক সাধারণ মানুষকে হয়রানির পর এবার তিনি এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নিঃস্ব করতে চালাচ্ছেন নানা অপতৎপরতা।
এ ঘটনায় মগর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ছালাম রাজাকারের বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বর নলছিটি থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (নম্বর- ২৭৩) করেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি।
ডায়েরি সূত্রে জানা গেছে, নলছিটির মগর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. সাহেদ আলী মৃধার ছেলে আব্দুস ছালাম মৃধা ওরফে ছালাম রাজাকার। ৭১’ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৌকাঠী গ্রামের রাজাকার কমান্ডার বজলুর রহমান মোল্লা বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকায় তিনি ছালাম রাজাকার নামে পরিচিত। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নলছিটি উপজেলা কমান্ডারের তৈরি করা রাজাকারের তালিকায় তার নাম ১০ নম্বরে রয়েছে। এদিকে যুদ্ধ শেষ হলেও পরিবর্তন হয়নি রাজাকার ছালামের চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট।
স্বাধীনতার প্রায় ৪৪ বছর পরেও তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সর্বশান্ত করতে চালিয়ে যাচ্ছেন ষড়যন্ত্র।
ডায়েরিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আমিরাবাদ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত আউয়াল মৃধা। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ছালাম রাজাকার বিভিন্নভাবে তার পরিবারের এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে আসছেন।
ছালাম মৃধা ও তার ভাই জালাল মৃধার অত্যাচারের কারণে আতঙ্কিত হয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল মৃধার মেয়ের জামাতা মো. জলিল তালুকদারসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
৭১’ সালে ছালাম ও তার বাবা সাহেদ আলী মৃধা মগড় ইউনিয়নের বনমালী সাজ্জাল ও তার সহোদর মঙ্গল সাজ্জালকে রাজাকারের হাতে তুলে দেন।
ডায়েরিতে আরো বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল মৃধার জীবদ্দশায় ছালাম রাজাকার তার ঘরে সিঁধ কেটে চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। এর দায়ে ছালাম রাজাকারকে চার বছর ছয় মাস জেল খাটতে হয়েছে। তবে জেল থেকে বের হয়ে পুনরায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এখন মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল মৃধার বাড়ির জমি-জমা ও গাছ-পালা জবরদখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।
প্রায় এক মাস আগে মুক্তিযোদ্ধা আউয়ালের পরিবারের সদস্যারা তাদের জমিতে বেড়া দিতে গেলে ছালাম এবং তার বড় ভাই জামাল মৃধা তাতে বাধা দেন। এমনকি তাদের হত্যাসহ দেশ থেকে উৎখাতের হুমকিও দেন তারা।
পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা আউয়ালের জামাতা জলিল তালুকদার স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ৭ নভেম্বর জমির সীমানা চিহ্নিত করণে পিলার স্থাপন করলে পুনরায় সীমানা পিলার উপড়ে ফেলাসহ নানা ভাবে হুমকি দেন তাদের।
জানা গেছে, ছালাম রাজাকার কালিজিরা নদীতে জাহাজ লুটকারী ও চৌকিদার বাড়ির ডাকাতি মামলায় কারাভোগ করেন। তিনি একজন ডাকাত, ধর্ষণকারী, নারীলোভী ও সর্বহারা নেতা।
ডাকাতি মামলায় ইতোপূর্বে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছেন। ছালাম রাজধানী ঢাকার মালিবাগ শান্তিনগর এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে রয়েছেন। মাঝে মধ্যে গ্রামে এসে স্থানীয় সাধারণ মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন।
ছালাম রাজাকারের অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি তার নিজের ভাগ্নে মো. দেলোয়ার হোসেন, তাজ মোহাম্মদ এবং ভাই হাফেজ মো. হারুন অর রশিদও।
দেশ ও বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করার কাজে তিনি তার সাঙ্গ পাঙ্গদের নিয়ে নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে দেশ বিরোধী চক্রান্ত ও স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা।
চতুর প্রকৃতির ছালাম মৃধা পুলিশি নজরদারী এড়ানোর জন্য ঘন ঘন বাসস্থান পরিবর্তন করেন। গ্রামের বাড়ি ছাড়াও ঢাকা, বরিশালসহ আরও অন্যান্য যায়গায় তার আস্তানা রয়েছে বলে জানায় গ্রামবাসী।
জমি-জমার ক্ষেত্রেও তার দস্যুতার জুড়ি নেই। নলছিটি উপজেলায় বি এস জরিপ চলাকালে তিনি বহু অসহায়, দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে তার নামে রেকর্ড করে নেন।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মতিউর রহমান জানান, ছালাম স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত। ছালাম ও তার বাবা সাহেদ আলী মৃধা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধার ওপর অত্যচার করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
আরএ