ঢাকা: যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চাইবে তাদেরও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করা হবে বলে হুশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে এবং তাদের বিচার করবো।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিউট মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিচার বন্ধ করতে চাইবে; বাংলাদেশের কোনো মানুষ যদি যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করতে চায়! আমি দেশবাসীকে বলবো তাদের ঘৃণা করার জন্য। তাদের আপনারা ঘৃণা করবেন। ’
‘আমাদের দেশকে অভিশাপমুক্ত করতে হবে। কারণ এই অভিশাপগুলো যতোদিন ঘাড়ে চেপে থাকবে ততোদিন এদেশের অগ্রগতি হবে না,’ বলেন বঙ্গবন্ধু তনয়া।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন-একেকটা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে দেশ একেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অভিশাপ মুক্ত হচ্ছে। ’
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে শেথ হাসিনাবলেন, ‘লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। তাদের আত্মত্যাগের মর্যাদা দিতে হবে। ’
বিভিন্ন মহলের যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ চেষ্টা কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বহুভাবে চেষ্টা করা হয়েছে, প্রচণ্ড আর্ন্তজাতিক চাপ। বিশ্বের অনেক বড় বড় কেউকেটা যারা, তারাও টেলিফোন করেছে যেন ফাঁসি না হয়, বিচার না হয়। বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। ’
‘কিন্তু আমরা একটা আর্দশ নিয়ে রাজনীতি করি। আমি মনে করি, আমি তো স্বজন হারিয়েছি; মা বাবা সবাইকে। যে পরিবারগুলো স্বজন হারিয়েছে তারা কেন ন্যায় বিচার পাবে না?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার অবাক লাগে অনেকে ফোন করে মানবাধিকারের কথা বলেছে। আমি প্রশ্ন করি কার মানবাধিকার? খুনিদের মানবাধিকার!’
‘তাহলে আমরা যারা ভিকটিম আমাদের কী কোনো অধিকার নেই? বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার নেই? খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে সবাই চিন্তাগ্রস্ত, তাদের জন্য দরদ?’
যুদ্ধাপরাধের বিচার ও রায় কার্যকর নিয়ে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কতো রকমের কথা হয়, তার কোনো হিসেব নেই। ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। ফাঁসি দিতে পারবে কিনা? এটা হলো কিনা, ওটা হলো কিনা? নানা কথা শুনতে হচ্ছে। কিন্তু যারা বলে তারা ভুলে যান, যখন কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হলো তখন কতো বড় বড় জায়গা থেকে টেলিফোন এলো, কতো চাপ, কতো কথা। কিন্তু আমরা রায় কার্যকর করেছি। ’
‘একটা কথা মনে রাখতে হবে। কোনো কাজ করতে গেলে সিদ্ধান্ত একবার নিলে, সেখানে অটল থাকতে হয়। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে হয়তো অনেক কথা বলতে পারে কিন্তু নিজের বিশ্বাস, আমি সঠিক পথে আছি কিনা। এই বিশ্বাসই হচ্ছে সব থেকে বড় জিনিস। আর এই বিশ্বাসের ওপর ভর করতে চললে সেখানে সাফল্য আসে। ’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেছিলেন উল্লেখ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেন। বিচারের রায়ও কার্যকর শুরু করেন। ১১ হাজারের মতো সাজাপ্রাপ্ত বন্দী ছিলো, অনেকে বিদেশে থেকে গিয়েছিলো, অনেকে ছিলো পলাতক। অনেকে পাকিস্তানের পার্সপোট নিয়ে পাকিস্তান ছিলো। ’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু পচাত্তরে তাকে হত্যা করার পর আর বিচার হয়নি। ’
‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে মার্শাল ল’ অডিনেন্স করে ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে। বিচার বন্ধ করে এবং এদের সবাইকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়। মুক্ত করে তাদেরই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসায়। ’
জিয়াউর রহমান লাখো শহীদ রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে অনেক ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষক বলা, মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি। ’
‘কিন্তু সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা যদি হতো তাহলে নিশ্চয়ই সে এইভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে তাদের আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসাতো না। ’
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা বিভিন্ন পদ দিয়ে পুরস্কৃত করলো এবং তাদের নিয়ে দেশটাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে নিয়ে গেলো।
সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুর করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
এমইউএম/এমএ
** কোনো শক্তি নেই দুনিয়াতে বিচার বন্ধ করে
** ‘বিষ দাঁত ভেঙে দিচ্ছি, দেবো’
** বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতির সঙ্গে তামাশা করেছেন খালেদা
** লাখো শহীদের রক্তের সঙ্গে জিয়া বেঈমানি করেছেন