হবিগঞ্জ: সমাধির ভেতরে ধুলোবালির স্তর, ছাদে গাছের ঝড়া পাতা, বিভিন্ন ধরনের আগাছা। যেন দেখার কেউ নেই।
হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকায় তার সমাধি। দূর-দুরান্তের লোকজন তো দূরের কথা, স্থানীয়রাও অনেকে জানেনা রবের সমাধি কোথায়!
প্রচারণা আর অযত্নে অবহেলায় নতুন প্রজন্মের কাছেও অচেনা থেকে যাচ্ছে তার সমাধিস্থল।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বিপরীত দিকে এই মহান মুক্তিযোদ্ধার নামে গবেষণা ও স্মৃতি পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে।
সেখানে ছাত্র-ছাত্রী কিংবা স্থানীয়দের আনাগোনাও আছে। কিন্তু তার সমাধি কোথায় তা অনেকেরই অজানা।
হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ছাত্র মোসাব্বির চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, তিনি মেজর জেনারেল (অব.) এম এ রবের নাম শুনেছেন, তার নামে নির্মিত পাঠাগারেও গেছেন। কিন্তু তার সমাধি কোথায় তা জানেন না তিনি।
শুধু মোসাব্বির-ই নয়, তার মতো তরুণ প্রজন্মের প্রায় সবাই জানেন না রবের সমাধিস্থলটি কোথায়।
সমাধির পাশেই স্থানীয় শুকুর আলীর (৫৫) বাড়ি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও রবের মৃত্যু বার্ষিকীসহ বিভিন্ন দিবস এলেই প্রশাসন এবং মুক্তিযোদ্ধারা সমাধি পরিষ্কার করেন, ফুল দেন। আর সারা বছর কারও কোনো খবর থাকে না। মাঝে-মধ্যে আমরা নিজেরাই পরিষ্কার করি। ’
স্থানীয় লোকজন জানান, এম এ রবের সমাধিস্থলটির অবস্থান হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগরের খোয়াই নদীর তীরে। সেখানে স্থানীয় লোকজন ছাড়া বাইরের লোকজনের তেমন যাতায়াত নেই বললেই চলে।
উপ-সর্বাধিনায়ক রবের সমাধিটি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দাবি জানান তারা।
যোগাযোগ করলে হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান বাংলানিউজকে বলেন, এম এ রবের সমাধিস্থলের কোনো তত্ত্বাবধায়ক নেই। তাই ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি মাঝে-মধ্যে পরিষ্কার করেন। ’
‘সমাধির স্থানটি পরিবর্তন করে এম এ রব পাঠাগার এলাকায় স্থানান্তরের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সমাধিটি স্থানান্তর করা হলে আর এরকম অবহেলা হবে না। ,’ বলেন তিনি।
১৯১৯ সালের ৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কুর্শ্বা-খাগাউড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মেজর জেনারেল (অব.) এম এ রব।
সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করে যোগ দেন ব্রিটিশ-ভারত সেনাবাহিনীতে।
দায়িত্ব পালন করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। ১৯৭০ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে থাকাকালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন, যোগ দেন রাজনীতিতে।
সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে থেকে বানিয়াচং-নবীগঞ্জ-আজমিরীগঞ্জ আসনে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
এরপর ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে এম এ রব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে নিযুক্ত হন।
মুক্তিযুদ্ধের সেকেন্ড ইন-কমান্ড (উপ-সর্বাধিনায়ক) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এ চিরকুমার মুক্তিযোদ্ধা।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘বীরউত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন ও পরিচালনার দায়িত্ব নেন এ কৃতি ব্যক্তিত্ব।
তার নেতৃত্বে গঠিত এ ট্রাস্টের জন্যই আজ অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ নভেম্বর ৫৬ বছর বয়সে রক্তশূন্যতা জনিত রোগে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘন্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫, আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর
এসআই/এমএ