ঢাকা: দায়িত্ব নেওয়ার পর উচ্চ আদালতের ছুটি কমাতে উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সম্প্রতি বিচারকদের ফুলকোর্ট সভায় উচ্চ আদালতের অবকাশকালীন ছুটি (নিজস্ব ছুটি) তিনদিন কমানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে।
উচ্চ আদালতের বিচারিক কর্মঘণ্টাও বাড়িয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
২০১৫ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ছুটি ছিলো ৬৫ দিন। ২০১৬ সাল থেকে তা কমে হবে ৬২ দিন।
ছুটির বিষয়টি ফুলকোর্ট সভার আলোচ্যসূচিতে ১ নম্বরে ছিলো। মামলাজট হ্রাস ও বিচারপ্রার্থী জনগণের দ্রুত বিচার প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০১৬ সালের অবকাশকালীন ছুটি ৪০ দিন নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এ বিষয়ে আলোচনা শেষে ৬২ দিন অবকাশকালীন ছুটি থাকবে বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়।
এতে দেখা যায়, ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল ও ২৪ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল (১০ দিন) গ্রীষ্মকালীন, ১৯ জুন থেকে ২৩ জুন, ২৬ জুন থেকে ৩০ জুন ও ৪ জুলাই ও ১০ জুলাই থেকে ১১ জুলাই (১৩ দিন) ঈদ-উল ফিতর, ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর, ২ অক্টোবর থেকে ৬ অক্টোবর, ৯ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর, ১৩ অক্টোবর, ১৬ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর ও ২৩ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর (৩০ দিন) বার্ষিক এবং ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর ও ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর (৯ দিন) শীতকালীন ছুটি থাকবে।
২০১৫ সালের সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বছরের সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ছুটি রয়েছে ৬৫ দিন, সরকারি ছুটি ২২ দিন এবং সাপ্তাহিক ছুটি ৯৪ দিন। অর্থাৎ মোট ছুটি দাঁড়াচ্ছে ১৮১ দিন। ফুলকোর্ট সভায় তিনদিন ছুটি কমানোয় ২০১৬ সালে কর্মদিবস হবে ১৮৭ দিন।
২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের মোট কর্মদিবস ১৮৪ দিন। অথচ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস হাইকোর্ট ও আপিল কোর্টে ১৮৫ দিন থেকে ১৯০ দিন কর্মদিবস, সিঙ্গাপুরের সুপ্রিম কোর্টে ২২৫ দিন কর্মদিবস, ভারতে ২২৮ দিন কর্মদিবস এবং পাকিস্তানে ২৩৫ দিন কর্মদিবস রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এমন দীর্ঘ ছুটি নিয়ে দায়িত্বের প্রথম দিনই বক্তব্য রেখেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ওইদিন আইনজীবীদের সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, বছরে অন্তত সুপ্রিম কোর্টে ২২০ দিন যদি আমরা কাজ করতে পারি, তাহলে মামলাজট ২০ শতাংশ কমে যাবে।
তিনি বলেন, আমি হাইকোর্ট বিভাগে যখন জুনিয়র জাজ ছিলাম তখন আমি বিষয়টি অনুভব করেছিলাম। আমি ১০ বছর আগে ফুলকোর্টে আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। শুধুমাত্র একজন বিচারপতি আমাকে সমর্থন করেছিলেন। এখন ছুটি কমানোর জন্য আলাপ করে দেখবো, যাতে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পথ বেরিয়ে আসে।
একইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আদালতের ছুটির তালিকা যেভাবে করা হয়, তাতে এ দীর্ঘ সময় আদালত বন্ধ থাকায় সাধারণ আইনজীবীদের প্রচণ্ড আর্থিক দূরাবস্থায় পড়তে হয়। তাছাড়া আমাদের আদালতে যে মামলার স্তুপ জমে আছে তাতে এতো দীর্ঘ ছুটি কোনোমতেই যৌক্তিক বা কাম্য হতে পারে না। আদালতের দীর্ঘ ছুটি হওয়া উচিত আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে। গ্রীষ্মকালে আমাদের কাজ করা কষ্টসাধ্য হয়। সুতরাং যদি বছরে শুধুমাত্র একমাস ছুটি ধার্য করা হয় এবং তা যদি হয় গ্রীষ্মের সময় তবে তা আমাদের সবার জন্য সুবিধাজনক বলে মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
ইএস/এএসআর