গোপালগঞ্জ: এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাওয়ার উপযুক্ত সময় তার। যৌবনে দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধে গিয়েছিলেন ইদ্রিস আলী মোল্লা।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। ফলে জাতি পেয়েছে একটি লাল সবুজের পতাকা, একটি মানচিত্র। কিন্তু জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন তিনি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নের খানারপাড় গ্রামে মো. তৈয়বুর রহমান মোল্লার ছেলে ইদ্রিস মোল্লা। বয়স যখন ২৮ এর কোটায় তখন শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে চলে যান ভারতে। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধকালীন কমান্ডার আফজাল মিয়ার নেতৃত্বে খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে যুদ্ধ করেন তিনি। খুলনার গল্লামারী, শিপিয়ার্ড, সাত নম্বর ঘাটসহ বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অস্ত্র জমা দিয়ে নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, তাই জীবিকার জন্য শুরু হয় সংগ্রাম। এরই মধ্যে সংসার জীবন শুরু করেন ইদ্রিস মোল্লা। যে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন, সেই হাতে ধরলেন রিকশার হ্যান্ডেল।
দীর্ঘদিন খুলনায় রিকশা চালিয়েছেন তিনি। আনুমানিক ২০ বছর আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে ফিরে আসেন নিজ গ্রাম। এখানে এসেও কিছুদিন রিকশা-ভ্যান চালিয়েছেন। পরে কাঠি বাজারে একটি চায়ের দোকান দেন এ মুক্তিযোদ্ধা। প্রায় ১৫/১৬ বছর আগ থেকে মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত এ সাহসী যোদ্ধা এ জরাজীর্ণ দোকানে চা বিক্রি করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী মোল্লার চার ছেলে ও তিন মেয়ে। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে মোহাম্মদ আলী মোল্লা কৃষি শ্রমিক, সাদ্দাম মোল্লা ও ইকবাল মোল্লা বাবার কাজে সহযোগিতা করেন আর ছোট ছেলে ইউনুচ মোল্লা স্থানীয় কে কে উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
ইদ্রিস আলী মোল্লা দুঃস্থ ও অসহায় মুক্তযোদ্ধা হিসেবে মাসিক আট হাজার টাকা সম্মানী পান। সম্মানী ভাতা আর চা বিক্রির টাকায় তার সংসার চলতো।
কাঠি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী আকতার হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী মোল্লা সহজ, সরল ও সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ ছিলেন। বাজারে মাসিক এক হাজার টাকা ভাড়ায় একটি জরাজীর্ণ দোকানে চা বিক্রি করতেন। এখানকার সব মুক্তিযোদ্ধা সকাল ও বিকেল তার দোকানে আড্ডা দিতেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে তিনি ফ্রি চা খাওয়াতেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী মো. রফিক বলেন, এ সাহসী যোদ্ধার সংসারে অভাব-অনটন প্রায় সব সময় লেগে থাকতো। বসবাসের একমাত্র ঘরটিও জরাজীর্ণ। তারপরও সাহসের সঙ্গে সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।
তার স্ত্রী রেখা খানম বলেন, আমার স্বামী দেশের জন্য যুদ্ধ করার পর বাকী জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। অভাবী সংসার তারপর তিনি সারা জীবন হাস্যোজ্জ্বল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। জীবিত থাকাকালীন তিনি যুদ্ধের অনেক গল্প আমাকে শুনিয়েছেন।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে একটি চলন্ত বাস তার চায়ের দোকানে ঢুকে পড়লে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে হাসপাতালে মারা যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
আরএ