ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লালমনিরহাট থেকে শামীম খান

ব্যক্তির চেয়ে বড় দল ও প্রতীক

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
ব্যক্তির চেয়ে বড় দল ও প্রতীক ছবি: কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালমণিরহাট থেকে: লালমনিরহাট পৌরসভার নির্বাচনী চিত্র বলছে, মেয়র পদে ভোটের অঙ্কে ব্যক্তি পরিচিতির চেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে দল ও দলের প্রতীক। এবারের স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে এবং দলের প্রতীকে হওয়ায় ভোটাররাও ঝুঁকবেন সেদিকেই।



সরেজমিনে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরের এই জেলা সদর পৌরসভার ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা ও প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অবতীর্ণ দুই প্রার্থীর মধ্যে। তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে এসেছেন। তাই ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র মো. সিরাজুল ইসলাম রিন্টু। পৌর এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তার পরিচিতি রয়েছে। তার রয়েছে সমৃদ্ধ পারিবারিক পরিচয়। তার বাবা এবং চাচা এ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। নিজেও ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন মেয়র হিসেবে। রিন্টুর দাদা হাজী কছিমুদ্দিন লালমনিরহাটে আওযামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। সব মিলিয়ে বড় পারিবারিক বলয় রযেছে তার।

তবে ভোটাররা বলছেন, পরিচিতির মূলে রয়েছে তার দল আওয়ামী লীগ ও প্রতীক নৌকা।

দলীয় বিবেচনায় বর্তমান মেয়র রিন্টুর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হালিম।

যুবদল নেতা আব্দুল হলিম পাশ্ববর্তী কালিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। পৌরসভার মধ্যে তার নিজস্ব পরিচিতি তেমন একটা নেই। দলের পরিচয়ই তার একমাত্র প্রধান পরিচয়।

তবে দলের মধ্যেও দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলাও মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাকে না দিয়ে হালিমকে মনোনয়ন দেওয়া বাবলার অনুগতদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।
বিএনপির এ অংশটি হালিমের পক্ষে এখনও সরব নয়।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে আব্দুল হালিম তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজনের বিরুদ্ধে তার কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলছেন।

আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা আমার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। সরকারি দলের লোকজন আমার কর্মীদের প্রভাবিত করার জন্য ভয়-ভীতি প্রলোভন দেখাচ্ছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি-না জানি না’।

‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হবো’ বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন হালিম।

বিএনপির প্রার্থী আব্দুল হালিম এ অভিযোগকে অনেকটাই প্রধান হাতিয়ার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার কর্মীদেরকে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগটি ভোটারদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তিনি।

বিএনপির প্রার্থীর এসব অভিযোগকে পুরোপুরি অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম রিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ অভিযোগ সত্য নয়। বিএনপি যখন জ্বালাও-পোড়াও করেছিলো, তখন এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে। পুলিশ যদি তাদের খোঁজে সেটা তো আমার বিষয় না, আমি কি করতে পারি? নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমি মনে করি।

গত ৫ বছরের পৌরসভার উন্নয়ন এবং আগামী দিনের করণীয়কে সামনে নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন রিন্টু। লালমনিরহাট পৌরসভাকে অত্যাধুনিক পৌরসভায় রূপ দিতে চান তিনি।

রিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, এ পৌরসভার ৪২ বছরের মধ্যে আমিই প্রথম বড় ধরনের কাজ নিয়ে এসেছি। শত কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে এ পৌরসভার নারী-পুরুষদের কেউ বেকার থাকবেন না। নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজ পাবেন তারা।

রিন্টুর বিজয়ের পথের কাঁটা হতে পারেন তারই দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম ওয়াহিদুল হাসান সেনা। বিদ্রোহী প্রার্থীদের আওয়ামী লীগ দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিলেও জেলা যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সেনা তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। তিনি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র।

মেয়রের অনুপস্থিতিতে পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এসএম ওয়াহিদুল হাসান সেনা। সেই ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১নং ওয়ার্ডে তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। মেয়র প্রার্থী হিসেবে ওই ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়াও ফেলতে পেরেছেন। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের তার পক্ষে টানার মতো অবস্থা নেই।

সেনা যতো ভোট টানবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিন্টুর জন্য ততো বেশি সমস্যা হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

এ তিনজন ছাড়াও আরও তিনজন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন লালমনিরহাট পৌরসভায়। তারা হলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম হুমায়ুন আখতার শিমুল, জেপি’র (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) প্রার্থী আব্দুর রশিদ এবং  ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী আমিনুর রহমান। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কোনো প্রার্থী নেই। দলটির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
এসকে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।