ঢাকা: বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে আনন্দ পান এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় যোদ্ধারা। এ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ক্রিকেটে সুদৃঢ় অবস্থান দেখে তাদের মনেও তৃপ্তি জাগে।
বাংলাদেশের রাজধানীতে বসেই কথায় কথায় শুভকামনা জানালেন কয়েকজন যোদ্ধা। তাদের সম্মানে একটি আয়োজনে নিজেদের অভিজ্ঞতা, অর্জন আর তৃপ্তির কথাগুলো ভাগ করে নিচ্ছিলেন হাসিমুখে।
বলছিলেন, পাকিস্তানের নৃশংসতায় জর্জরিত একটি দেশ ক্রমান্বয়ে বিশ্বের বুকে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে দেখে ভালো লাগে তাদের। কারণ, স্বাধীনতা আদায়ের যুদ্ধে বাংলার দামালদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলেন তারাও, নিয়েছিলেন জীবনের ঝুঁকি।
‘বাংলাদেশের আজকের উন্নয়নচিত্র চোখে পড়ার মতো। খুব ভালো লাগে দেশটির এগিয়ে যাওয়া দেখে। সে সময়ের বিধ্বস্ত বাংলাদেশের সঙ্গে সত্যিই মেলে না এখন’, বলেন লে. জেনারেল বিষ্ণুকান্ত চতুর্বেদী (অব.)।
আরেক যোদ্ধা মেজর জেনারেল রাজেন্দ্র নাথ (অব.) বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো সাফল্যে খুব ভালো লাগে। অবকাঠামোতে যে উন্নয়ন, ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশের যে অবস্থান- এসব দেখে মন ভরে যায়।
এ যোদ্ধারা বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কল্যাণ কামনা করি আমরা। বিশ্বের সব ধরনের উন্নয়নে এ দেশটি থাকুক। এটি আমাদের পরিবার বলে মনে করি। আমরা একসঙ্গে সব ভাববো, সব কাজ করবো। এ সম্পর্ক খুব জোরালো, অন্য অনেক সম্পর্কের চেয়ে এটি ঘনিষ্ঠ।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন ভারতের ৬০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সেদেশের সশস্ত্র বাহিনীর যেসব সদস্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যের ২৭ সদস্য রয়েছেন এ দলে। স্বজনদের নিয়ে বাংলাদেশের গৌরবে অংশ নিতে এসেছেন। সঙ্গে এনেছেন বর্তমানে কর্মরত পাঁচ সদস্যকেও।
ভারতের এসব মুক্তিযোদ্ধারা স্বাভাবিকভাবেই এখন অবসরে। যুদ্ধের সময় ছিলেন টগবগে তরুণ। প্রতিবেশী দেশটির জন্য প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশের কাছ থেকে শ্রদ্ধাও কম পাননি বলে জানালেন তারা।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার আয়োজনে ২৭ যোদ্ধাকে সম্মান জানালেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
রাতের খাবারের আগে তিনি অতিথিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার প্রমাণ রেখেছেন সে সময়টিতে। আপনাদের অবদান বাংলাদেশ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, করবে আজীবন।
বাংলাদেশের এ বিজয় আনন্দে তাই আপনারাও অংশীদার। এ সম্পর্ক অসাধারণ, অন্য অনেক সম্পর্কের চেয়ে জোরালো, বলেন শফিউল হক।
সেনাপ্রধান কথা শেষ করলে প্রতিনিধি দলের নেতা বিষ্ণুকান্ত চতুর্বেদী বলেন, সত্যি, রক্তের সম্পর্কের চেয়েও এটি অনেক ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশ সরকারকে অনেক ধন্যবাদ, আমাদের স্মরণ রাখায়। ভালো লাগে আপনাদের এ আন্তরিকতা, আতিথেয়তা। বিমানবন্দরে নামার পর থেকে আপনাদের আন্তরিক অভ্যর্থনায় ভাসছি।
ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট রেলওয়ে, সুরমার দিকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়েছেন এ যোদ্ধা। বলেন, এটি একত্রিত সম্পর্ক। অন্য যেকোনো সম্পর্কের চেয়ে এটি ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশে এসে সম্পর্কটি আরও জোরালো মনে হচ্ছে। ইতিহাসের একটি অংশ হিসেবে আমাদের সঙ্গে রাখায় সম্মানিতবোধ করছি। ধন্যবাদ জানাই সরকার, সেনাবাহিনী ও সবাইকে।
রাজেন্দ্র নাথ বলেন, মুক্তিবাহিনী আমাদের সবসময় সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে যুদ্ধে। এক তরুণ প্রকৌশলীর সে সময়ের উদ্যমের কথা এখনও মনে পড়ে। আমি অনেককেই প্রশিক্ষণ দিয়েছি, খুব কম সময়ে তারা দক্ষ যোদ্ধা হয়ে উঠতেন। তাদের ভুল কম হতো। তারা যে তথ্য দিতেন, সে ভিত্তিতে আমরা পাকিস্তানিদের অবস্থান জানতে পারতাম।
এ যোদ্ধা বলেন, আমরা বন্ধুরাষ্ট্র। এখন আমি বৃদ্ধ। জীবনের এ পর্যায়ে এসে আবারও কৃতজ্ঞভরা সম্মান জানাই মুক্তিবাহিনীকে। সবচে বেশি সম্মান জানাই যারা স্বজন হারিয়েছেন। আপনাদের এ অভ্যর্থনা, ভালো হোটেলে আপ্যায়ন- সব ভালো লাগছে, ধন্যবাদ।
আপ্যায়নে যেন ত্রুটি না হয়, সেজন্য আগে থেকেই অতিথিদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য রেখেছেন বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, সদস্যরা বয়স্ক হলেও প্রত্যেকে সুস্থ-সবল রয়েছেন। তবু তাদের যত্নের সুবিধায় তাদের মধ্যে কে ‘ভেজিটেরিয়ান’ আর কে ‘নন-ভেজ’- সে তালিকাটিও রাখা হয়েছে। যেমন- বিঞ্চুকান্ত ‘ভেজিটেরিয়ান’, কিন্তু রাজেন্দ্র নন-ভেজ।
গল্প শেষে ভারতীয় এ বীর যোদ্ধাদের হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন সেনাপ্রধান।
আইএসপিআর সূত্র জানায়, ১৬ ডিসেম্বর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধা, ১৮ ডিসেম্বর কাপ্তাই লেক ও নিলগিরি, ১৯ ডিসেম্বর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবে এ দলটি।
এরপর ২০ ডিসেম্বর ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন বাংলাদেশের এ বন্ধুরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এসকেএস/এসএস