ঢাকা: অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশে শরনার্থী হিসেবে থাকা রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি। প্রথম পর্যায়ে ২ হাজার ৪শ ১৫ জনকে ফেরত নেওয়ার কথা জানালেও এ বিষয়ে এখন মুখ খুলতে নারাজ মায়ানমার কর্তৃপক্ষ।
দফায় দফায় আলোচনার পর বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে ফেরত নিতে সম্মত হয় মায়ানমার। দেশটির শর্ত অনুযায়ী যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপও তৈরি করা হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দোহাই দিয়ে বিষয়টি এখন এড়িয়ে যেতে চাইছে এই প্রতিবেশি রাষ্ট্র।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার বিষয়টি প্রায় দীর্ঘ নয় বছর ঝুলে ছিল। ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ও মায়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত অষ্টম এফওসি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দুই মাসের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও পুরো প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে দেয়। পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হলেও দুই দেশের গ্রুপ এখনো কোনো বৈঠকে বসতে পারেনি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। পরে যদিও এ প্রক্রিয়া শুরু হয়, কিন্তু মায়ানমারের সাধারণ নির্বাচন সামনে থাকায় মুসলিম রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে চায়নি দেশটির সরকার। ফলে পুরো প্রক্রিয়াই ২০১৬ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময়ের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসার পরও দেশটির নতুন সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চাইছে না। অন্যান্য আরো অনেক ইস্যু অগ্রাধিকার পাওয়ায় রোহিঙ্গা সমস্যাটি কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এ বিষয়ে মায়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপও তেমন নেই। এ কারণে শিগগির এ শরনার্থীদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
তবে দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ায় অব্যাহতভাবে বিষয়টি সমাধানে বাংলাদেশ কাজ করে যাবে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অন্যতম অংশ এর দ্বিতীয় সীমান্ত প্রতিবেশি মায়ানমার। সেই হিসেবে দেশটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা নিয়ে ২০১৩ সালে জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে। মায়ানমারেও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যাতে অনেক বন্ধু রাষ্ট্র সহযোগিতাও করছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে বিষয়গুলো সমাধানে এ যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
২০১২ সালে বাংলাদেশকে একটি তালিকা দেয় মায়ানমার। সে অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে কুতুপালং ও নোয়াপাড়া উদ্বাস্তু শিবিরে অবস্থানরত ২ হাজার ৪শ ১৫ জনকে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা। উদ্বাস্তু শিবিরের প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে মায়ানমার কর্তৃপক্ষ এই ক’জনকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ছাড়পত্রও দেয়। এর আগে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর থেকে প্রক্রিয়াটি বন্ধ ছিল।
প্রায় দুই দশক আগে জাতিগত ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করে।
এদিকে, এদেশে অবস্থানরত অবৈধ রোহিঙ্গা নাগরিকদের ছবি ও অন্যান্য তথ্য নিয়ে একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থান ও এদেশে অনুপ্রবেশের পূর্বে মায়ানমারে তাদের মূল বাসস্থানের ঠিকানা বের করা হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কারণ এবং এদেশে তাদের আর্থ-সামাজিক ও জনমিতি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান বের করবে সরকার। কক্সবাজার, বান্দরবন, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও পটুয়াখালী জেলায় এ জরিপ চালানো হবে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নোয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত ৩২ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এর বাইরে আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
জেপি/আরএইচ