ঢাকা: অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালেও তেমন কোনো অর্জন নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শুরু করে পৌরসভা নির্বাচন নিয়েও যতো বির্তকের জন্ম দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
এদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েও কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
তিন সিটি নির্বাচন
বিদায়ী বছরের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করে ইসি। কিন্তু এ নির্বাচনকে কেন্দ্র এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সংস্থাটি। এতে ভোট কারচুপিতেও এক নতুন মাত্রা যোগ হয়।
এ নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে ভোটের দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। এর ফলে ব্যাপক কারচুপি হয় কোনো কোনো কেন্দ্রে। অনিয়মের কারণে অনেক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধও করে ইসি।
যা ওইদিনই বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ স্বীকার করেন। তিনি ওইদিন বলেন, ‘পুলিশকে পর্যবেক্ষক নীতিমালা পড়ে শুনিয়ে আশ্বস্ত করেছি। এর পরে আর সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে অসুবিধা হয়নি’।
এ ঘটনায় সারাদেশেই ইসির ভূমিকা আর সক্ষমতা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম হয়। এছাড়া বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা দুপুরের আগেই নির্বাচন বর্জন করেন।
পৌর নির্বাচন
দেশে নবমবারের মতো চলছে পৌরসভা নির্বাচনের আয়োজন। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই এ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয় ইসি। দলীয়ভাবে মেয়র পদে এ নির্বাচন করার সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে সবকিছুতে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে ইসি সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দেয় নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে।
সরকার প্রায় একমাস সময় নিয়ে আইন প্রণয়ন করলেও নির্বাচন কমিশন একদিনের মধ্যেই বিধিমালা প্রস্তুত করে ফেলে। এক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনের মতোই দলীয়ভাবে পৌরসভার মেয়র পদের নির্বাচন হলেও প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান আনা হয়। এক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলো প্রার্থী মনোনয়নে বিপাকে পড়ে।
এছাড়া প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে নারীদের অবমাননা করা হয়। এতে চুড়ি, ফ্রকের মতো প্রতীকও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণ করে ইসি। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক বিতর্কের জন্ম হয়। অবশেষে ভবিষ্যতে অবমাননাকর প্রতীক বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেয় সংস্থাটি।
এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলের পক্ষ থেকেই ইসির বিরুদ্ধে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করতে পারেনি বলে অভিযোগ তোলে। যদিও সিইসি বলেছেন, সবার প্রশ্ন তোলাতেই নিরপেক্ষতা প্রমাণ হয়েছে।
ইভিএমে কোনো সুখবর নেই
রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ করে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিগত নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার শুরু করেছিলো ২০১০ সালে। পরিকল্পনা ছিলো স্থানীয় পর্যায়ে এর ব্যবহার নিশ্চিত করে জনপ্রিয়তা অর্জনের পর জাতীয় নির্বাচনেও যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে। অথচ এসব মেশিন এখন কোনো কাজেই লাগাতে পারছে না কমিশন।
স্থানীয় সকল নির্বাচনে যন্ত্রটি ব্যবহারের বিধিমালা তৈরি করার পরও এটি পড়ে আছে ইসির গোডাউনেই। মূলত ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি ইভিএম মেশিনে ত্রুটি দেখা দিলে তা এখন পর্যন্ত ঠিক করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ওই নির্বাচনে ইভিএমে ত্রুটি দেখা দেওয়ার কারণও জানতে পারেনি ইসি। বেশ কয়েকবার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে এ নিয়ে তাগাদা দিলেও তারা এ ত্রুটির জন্য দায়ী নয় বলে ইসিকে জানিয়েছে।
ফলে ইভিএম এখন মৃত প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে ইসি’র সিস্টেম ম্যানেজার বাংলানিউজকে বলেন, ইভিএমের ত্রুটি সারানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর ত্রুটি না সারানো পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই এটি ব্যবহার করা যাবে না।
স্মার্ট কার্ড
দেশের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক, যারা ভোট হয়েছেন, তারা সকলেই উন্মুখ হয়ে আছেন স্মার্ট কার্ড বা উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাবেন বলে। আর এর কারণও ইসিই। কেননা, প্রতিষ্ঠানটি অন্তত তিনবার ঘোষণা দেওয়ার পরও তা দিতে পারেনি। অবশেষ গত অক্টোবর মাসে সিইসি বলেছেন, আমরা কাজ গুছিয়ে এনেছি। তবে, কবে নাগাদ এটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে তা বলা যাচ্ছে না।
ইসি’র এনআইডি শাখার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা স্মার্ট কার্ড ছাপানোর কাজ শুরু করেছি। শিগগিরই তা বিতরণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাংবাদিক মারধর
সবকিছু ছাপিয়ে দেশব্যাপী যে ঘটনা সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে, তা হলো সাংবাদিক মারধরের ঘটনা। গত আগস্ট মাসে ইসি’র এনআইডি শাখায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের দু’জন সাংবাদিককে মারধর করেন সংস্থাটির একটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ। একই সঙ্গে দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনও নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
ইইউডি/এএসআর