ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা ২০১৫

বাগেরহাটে ১১ ফাঁসি, ৩৯ জনের যাবজ্জীবন

সরদার ইনজামামুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
বাগেরহাটে ১১ ফাঁসি, ৩৯ জনের যাবজ্জীবন

বাগেরহাট: চলতি বছরে (২০১৫) বাগেরহাটে বিচারাধীন ১২টি মামলার রায়ে ১১ জনকে ফাঁসির ও ৩৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।



সূত্র জানায়, ৩ মার্চ বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর  বিচারক একটি হত্যা মামলায় আবুল কালাম আজাদ ওরফে আদোন (৪১) নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। ২০০২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় ইকরাম আলী শেখ (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে তাকে এ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

২৩ মার্চ একটি হত্যা মামলায় বিএনপি নেতাসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২। ২০০৭ সালের ২৫ মে বাগেরহাট শহরের হরিণখানা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক শেখ ওরফে কালাই খোকনকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে আদালত এ রায় দেন।

২১ এপ্রিল বাগেরহাট সদরের খানজাহান আলী (রহ.) মাজার সংলগ্ন পাটরপাড়ার মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী তাজুল হোসেন মীর তাজ হত্যা মামলায় পাঁচজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। ২০০৯ সালের ৯ জুন আসামিরা তাজকে হত্যা করে তার মৃতদেহ গুম করে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এ রায় দেন।

১৯ মে জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার এক চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেন হাওলাদারকে হত্যার দায়ে চারজনকে ফাঁসির ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২০০৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়।

৪ জুন সুন্দরবনের কুখ্যাত বনদস্যু জিহাদ বাহিনীর ১০ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বাগেহাটের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-২। ২০০৯ সালে ২৮ জানুয়ারি সুন্দরবনের সুপতি স্টেশন সংলগ্ন বনের ভেতর দিয়ে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বনদস্যু জিহাদ বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এ রায় দেওয়া হয়। রায়ে প্রত্যেককে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (ক) ধারা এবং ১৯ (চ) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে দু’টি দণ্ডই একসঙ্গে কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাগেরহাটের স্থানীয় রাজু নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ২৭ জুলাই এ রায় দেওয়া হয়। যাত্রাপুর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে দলীয় কোন্দলের জেরে ২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তাকে হত্যা করে আসামিরা।

মোরেলগঞ্জে মোতাহার গাজী নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে ১০ আগস্ট তার ছেলে বাদশা গাজীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ২০১০ সালের ৯ ফেব্রুয়রি মোরেলগঞ্জের মানিকজোড় গ্রামের বাসিন্দা মোতাহার ছেলের হাতে খুন হন।

১৯ আগস্ট জাকারিয়া বেহারা নামে এক ভ্যানচালককে হত্যার দায়ে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীকলস গ্রামের জাহাঙ্গীর বেহারার ছেলে ভ্যান চালক জাকারিয়া বেহারাকে হত্যার দায়ে আদালত এ রায় দেন।

২৮ অক্টোবর স্ত্রী হত্যার দায়ে চাকলাদার আবু সাঈদ (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি রামপালে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

১ নভেম্বর বাগেরহাটের ফকিরহাটে তুষার মণ্ডল (২৮) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত। তিনি পুলিশ হত্যা মামলার স্বাক্ষী ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর তাকে হত্যা করা হয়।

৩ নভেম্বর আব্দুর রহিম ফকির নামে এক বিএনপি কর্মী হত্যা মামলার দায়ে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত। প্রায় এক যুগ আগে মোরেলগঞ্জে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড হয়।

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ২৮ মে জেলার শরণখোলা উপজেলার রুস্তুম আলী হাওলাদারের স্ত্রী ফরিদা বেগমকে (৫৫) হত্যা করা হয়। ১১ নভেম্বর এ হত্যা মামলার আসামি রুহুল হাওলাদারকে (৪১) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-এক।

বাগেরহাটের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মোহম্মদ আলী বলেন, বাগেরহাট আদালতে চলমান হত্যা, গুম, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা জনগুরুত্বপূর্ণ ১২টি মামলার রায় হয়েছে চলতি বছর। এসব রায়ে প্রকৃত দোষীরা দণ্ডাদেশ পাওয়ায় বিচার বিভাগের ওপর সাধারণ জনগণের আস্থা বেড়েছে।

বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ড. এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের প্রথম দিকে বাগেরহাটে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের পদ শূন্য থাকায় মামলা জটের সৃষ্টি হয়। তবে মো. মিজানুর রহমান খান এখানে বিচারক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে মামলা জট কমাতে কাজ করছেন। ফলে চাঞ্চল্যকর মামলা ছাড়াও সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালতে বিচারিক কাজে গতি এসেছে।

এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে বাগেরহাট আদালতে মামলা জট শূন্যের কোটায় আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।