ঢাকা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, ভূমিধ্বস, সন্ত্রাস, ক্ষুধা ও দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে শিশুপাচারকারীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এধরনের ২০টি জেলাকে চিহ্নিত করেছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা।
যে জেলাগুলোতে শিশুপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন সোস্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক ইনহেন্সমেন্ট প্রোগ্রামের (সিপ) পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং পরে সংবাদ সম্মেলনে এবিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ফুড লাভারস প্লাজায় প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দু’টি কর্মসূচিতেই মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন সিপের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক জাহিদ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রকল্প সমন্বয়কারী মনিরুজ্জামান মুকুল ও ইসরাত জাহান বিজু।
সিপের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, ভূমিধ্বস, সন্ত্রাস, ক্ষুধা, এতিম, দারিদ্রতার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে পাচারকারী চক্র। পাচার হওয়া শিশুদের তারা যৌন পেশাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বাধ্য করছে। পাচার হওয়া শিশুরা নানা ধরনের নির্যাতন ও অন্ধকার জীবন বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
২০০৩-১২ সাল পর্যন্ত দুই লাখ মেয়েকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে যৌনকর্মে নিয়োজিত হতে বাধ্য করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শিশুপাচারের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণতে রয়েছে- যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, ঝিনাইদহ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা। যেখানে শিশুপাচার প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
এবিষয়ে সিপ কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় দেশে মানব পাচার চলছে। বিশেষ করে শিশুপাচার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে পাচারকারীদের তৎপরতা বেশি। পাচারকারীরা মেয়ে শিশুদের দেশে ও দেশের বিভিন্ন পতিতা পল্লীতে বিক্রি করছে। যেখানে তাদের উপর যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
আর ছেলে শিশুদের গাড়ি ধোয়া-মোছা, মাদক বিক্রি, চুরি, পকেটকাটাসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাত থেকে রক্ষায় বিদ্যমান ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২’-এর আলোকে শিশুসুরক্ষা বেষ্টনি গড়ে তোলা জরুরি। একইসঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশে কি সংখ্যক শিশু পাচারের শিকার হচ্ছে, এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। পাচার প্রতিরোধে জেলা পর্যায়ে গঠিত মনিটারিং কমিটিও কার্যকর নয়। তাই শিশুপাচার বন্ধে বিদ্যমান আইনগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা, জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে পাচার প্রতিরোধ কমিটিকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এসএম/এসএইচ