ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি, টংক আন্দোলনের মহানায়ক, মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের উপদেষ্টা কমরেড মণি সিংহের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর)। ১৯৯০ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
১৯০১ সালের ২৮ জুলাই কলকাতার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মণি সিংহ। তার বাবা কালী কুমার সিংহের মৃত্যু হলে, মা সরলা দেবী ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরে।
এখানে সরলা দেবী তার ভাইদের জমিদারীর অংশীদার হয়ে বসবাস শুরু করেন।
স্কুলে পড়াকালে মণি সিংহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন‘অনুশীলন’ দলে যোগ দিয়ে ক্রমেই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনের বিপুল গণজাগরণ তরুণ মণি সিংহের মনে গভীর রেখাপাত করে।
এরপর ১৯২৮ সাল থেকে কমিউনিস্ট পার্টির একনিষ্ট কর্মী হিসেবে নিজেকে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে উৎসর্গ করেন তিনি। এ জন্য বেশ কয়েকবার জেলেও যেতে হয় তাকে।
১৯৩৫ সালে জেল থেকে মুক্তি পেলেও নিজ গ্রাম দুর্গাপুরে তাকে অন্তরীণ করে রাখা হয়। এরপর কৃষক আন্দোলনের পাশাপাশি ‘টংক প্রথা’র বিরুদ্ধেও স্বোচ্চার ভূমিকা পালন করেন তিনি।
কৃষাণ সভার প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার পর ১৯৪৫ সালে নেত্রকোনায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কৃষাণ সভার ঐতিহাসিক সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান হন মণি সিংহ।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ণ গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজের আদর্শকে সামনে নিয়ে এসেছেন তিনি। ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের চাপে বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা মামলার অন্যান্য রাজবন্দীর সঙ্গে মণি সিংহও জেল থেকে বেরিয়ে আসেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বন্দীরা রাজশাহীর জেল ভেঙে তাকে মুক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নির্বাচিত করা হয় তাকে।
স্বাধীনতার পর পূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে আজীবন সোচ্চার ছিলেন কমরেড মণি সিংহ।
এদিকে কমরেড মণি সিংহের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিপিবিসহ নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
দুর্গাপুরে কমরেড মণি সিংহ মেলার আয়োজন করা হয়েছে; যা বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
এক বাণীতে কমরেড মণি সিংহের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মণি সিংহ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনসহ সারা জীবন কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন।
‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কমরেড মণি সিংহের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সর্ম্পক ছিল গভীর সৌহাদ্যপূর্ণ। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুর্নগঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ’
মণি সিংহের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার আত্মার শান্তি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে এক বিবৃতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সিপিবির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
এসকে/এমএ