ঢাকা: ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার দায়ে দু’জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আট আসামির বাকি ৫ জন পেয়েছেন বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ঢাকার খিলক্ষেত চৌধুরীপাড়ার মো. ফয়সাল বিন নাঈম দ্বীপ (২২) ও ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার জয়লস্করের রেদোয়ানুল আজাদ রানা (৩০)। তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থানার ধলেশ্বর গ্রামের মাকসুদুল হাসান অনিককে (২৩)। তাকেও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানিকে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২ হাজার টাকা জরিমানা ও জরিমানা অনাদায়ে ২ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার পোড়াপাড়া গ্রামের মো. এহসান রেজা রুম্মান (২৩), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কলেজপাড়ার নাঈম ইরাদ (১৯) ও চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া গ্রামের নাফিজ ইমতিয়াজকে (২২) দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ১০ বছর কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও জরিমানা অনাদায়ে প্রত্যেককে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ও ঢাকার কলাবাগান থানার ভুতের গলির সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে (২০) দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ৩ বছর কারাদণ্ড, ২ হাজার টাকা জরিমানা ও জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
জসীমউদ্দিন রাহমানি ছাড়া সবাই ঢাকার বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ছাত্র।
আসামিদের মধ্যে রাজীব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত রেদোয়ানুল আজাদ রানা পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া অন্য সাতজন আসামিকে রায় শোনাতে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে ব্লগার হত্যার প্রথম এ রায় দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ।
মামলাটিতে ৫৫ জন সাক্ষীর মধ্যে রাজীবের ছোটভাই স্থপতি নেওয়াজ মর্তুজা হায়দারসহ ৩৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ছাত্রসহ আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানিকে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে একই বছরের ২০ আগস্ট ও বাকিদের ১০ মার্চ গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
গ্রেফতার হওয়ার পর ২০১৩ সালের ১০ মার্চ রাজীব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ছাত্র ফয়সাল বিন নাঈম দ্বীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় স্থপতি রাজীব হায়দারকে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় এ মামলা করেন।
গত সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) মামলাটির যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ৩১ ডিসেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এমআই/এএসআর
** ‘ব্লগার রাজীব হত্যার রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে’