ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৩ খুনির ফাঁসি কার্যকর আশান্বিত করেছে, তবে আনন্দিত নই

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৬
৩ খুনির ফাঁসি কার্যকর আশান্বিত করেছে, তবে আনন্দিত নই

যশোর: কুষ্টিয়ার আলোচিত জাসদের ৫ নেতা হত্যা মামলায় তিন আসামির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় আশান্বিত করেছে তবে আনন্দিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন নিহতের স্বজন, মামলার সাক্ষী ও জাসদ নেতারা।

বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) রাতে ফাঁসি কার্যকরের পরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা এ মন্তব্য করেন।



কাজী আরেফ আহমেদের স্ত্রী বাংলাদেশ মহিলা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক এমপি রওশন জাহান সাথী মুঠোফোনে বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী হত্যা মামলার ৩ আসামির ফাঁসি হওয়ায় ন্যায্য আইনগত অধিকারের প্রতিফলন ঘটেছে এবং আশান্বিত করেছে।

তবে এই মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক পাঁচ আসামি আটক না থাকায় পুরোপরি সন্তুষ্টি হতে পারিনি। অবিলম্বে পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে তাদেরও ফাঁসি কার্যকর করা হোক, যোগ করেন তিনি।

একই ঘটনায় নিহত কুষ্টিয়া জেলা জাসদের তৎকালীন সভাপতি লোকমান হোসেনের বড় ছেলে আল মোজাহিদুল ইসলাম মিঠু বলেন, হত্যাকান্ডের ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও পুলিশ পাঁচ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারল না, এটা খুবই দুঃখজনক।

নিহত জাসদ নেতা এয়াকুব আলীর ছেলে ইউসুফ আলী রুশো বলেন, রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে আশান্বিত করেছে। তবে অনতিবিলম্বে বাকি আসামিদের ফাঁসি করার্যকর করলে আমরা সস্তি পাবো।

এ মামলার অন্যতম স্বাক্ষী কারশেদ আলম বলেন, ৩ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে জানতে পেরে আমি আনন্দিত।

তিনি আরও বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর আদালতে গিয়ে সাক্ষী দিয়েছি। ঘটনার দিন নিজের চোখে কাজী আরেফসহ জাসদের ৫ নেতাকে ব্রাশ ফায়ারের দৃশ্য চোখের সামনে দেখেছি। সেই থেকে বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছিলাম এ রকম একটি দিনের জন্য। এই ৩ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। অনতিবিলম্বে বাকি ৫ আসামির ফাঁসির দন্ড কার্যকর করলে তিনি আনন্দিত হবেন বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের তৎকালীন সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মন্ডল। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০০৪ সালের ৩০ অগাস্ট কুষ্টিয়ার জেলা জজ আদালত ১০ জনের ফাঁসি ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেয়।

তবে ওই সময়, ফাসির দন্ডাদেশ পাওয়া ৬ আসামি পলাতক ছিলো। ২০০৮ সালে এক ফাঁসির আসামি ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ১২ জনকে আপিলে খালাস দেন, হাইকোর্ট। এতে খালাস পাওয়া সব আসামীর বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আর খালাসের আবেদন করে, মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়া তিন আসামি রাশেদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও ইলিয়াস হোসেন। হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখেন, আপিল বিভাগ। পরে, রিভিউ আবেদন করে, রাশেদুল ও আনোয়ার। তবে, সেখানেও তাদের ফাঁসির দন্ড বহাল থাকে। আর কারাগারেই মারা যান, ইলিয়াস।  

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চান, ফাঁসির দন্ড পাওয়া রাশেদুল ও আনোয়ার। তবে, তা নাকচ করে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি। ফলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফাঁসির রায় কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

এ মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক পাঁচ আসামিরা হলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পচাভিটা গ্রামের মান্নান মোল্লা, মিরপুর উপজেলার কুর্শা মেহেরনগরের রমজান আলীর ছেলে জাহান আলী, বালিয়াশিষা গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নায়েব মন্ডলের ছেলে রওশন ও কিশোরীনগর গ্রামের মোজাহার উদ্দিনের ছেলে বাকের উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২২ ঘণ্টা,জানুয়ারি ০৮, ২০১৬
আরএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।