বরিশাল: খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম-এমপি বলেছেন, বর্তমান সরকার স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার। এ সরকারই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করবে।
রোববার (৩ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টায় নগরীর খাদ্য ভূমি অঙ্গণ ও বধ্যভূমি এলাকায় শহীদ এডিসি কাজী আজিজুল ইসলাম সড়কে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও খাদ্য অধিদপ্তরের আয়োজনে বরিশালের সুশীল সমাজ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশের আটটি বিভাগে আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ করা হবে। যেখানে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা থাকবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত এ সাইলোতে গম বা চাল সংরক্ষণ করলে কোনো ধরনের কেমিক্যাল বা ওষুধ লাগবে না। কোনো কেমিক্যাল ছাড়াই তিন বছর পর্যন্ত এসব পণ্য ভালো থাকবে।
তিনি বলেন, আটটি বিভাগের মধ্যে সাতটি বিভাগে এ সাইলো নির্মাণে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে বরিশালে সাইলো নির্মাণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সাইলো সাধারণত নদী পারে নির্মাণ করা হয়। যাতে মেশিন দিয়ে সরাসরি গুদামে পণ্য রাখা যায়। এছাড়া এটিকে সরিয়ে দূরে নেওয়া হলে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, এ কারণে নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছি, বধ্যভূমি রক্ষার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা চিন্তাও করতে পারিনি ৭১’র ঘাতকদের বিচার হবে, কিন্তু বর্তমান সরকার দেশনেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ৭১‘র ঘাতকদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে ত্রিশ গোডাউনের সামনে ও কীর্তনখোলা নদীর তীরে এ জায়গা নির্ধারণ করা হয়। ২০১১ সালে জরিপসহ সব কাজ বিশ্ব ব্যাংকের হয়ে বিদেশিরা করেছে। তারা এখানে এসে থেকে ও কাজ করেছেন। তখন যদি আপনাদের দাবি তুলে ধরতেন তবে এমন হতো না। এখন স্থান পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠালে এক বছরের জন্য আমরা পিছিয়ে যাবো। কারণ, সার্ভে থেকে শুরু করে সবকিছুই আবার নতুন করে করতে হবে।
তবে একটি প্রস্তাব দিচ্ছি, যদি আপনারা চান তবে কয়েক বিঘা জায়গা ছেড়ে দিয়ে অন্যখাত দিয়ে দু, চার, পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করে এ বধ্যভূমি এলাকার যাবতীয় সৌন্দর্য তৈরিতে ব্যয় করবো। পাশাপাশি সাইলোর কাজও চলবে।
আর এতে আপনারা রাজি না থাকলে এখানে খাদ্য গুদাম হবে না। অন্য কোনো জায়গা খুঁজে নিতে হবে আমাদের, তবে সেটা বরিশাল, পিরোজপুর না ভোলায় হবে সে কথা আমি বলতে পারবো না।
আপনাদের সাতদিনের (১০ জানুয়ারি পর্যন্ত) সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে আপনারা সিদ্ধান্ত জানাবেন। আর আজ থেকে এখানে সব কাজ বন্ধ থাকবে। আপনাদের সিদ্ধান্তে নির্ভর করবে এখানে না নতুন করে অন্য কোথাও সাইলোর কাজ হবে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল ২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, বরিশাল ৩ আসনের সংসদ সদস্য টিপু সুলতান, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, খাদ্য বিভাগের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর গাজীউর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম আকতারুজ্জামান, মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আব্দুর রউফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কতুব উদ্দিন, মোখলেসুর রহমান, এনায়েত হোসেন, এমজি কবির ভুলুসহ বরিশাল বধ্যভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ, বরিশাল জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সন্তান কমান্ড, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্নয় পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রবীণ সাংবাদিক ও বধ্যভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, আমরা বরিশালবাসী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিজরিত এ বধ্যভূমি এলাকার সৌন্দর্য, পুকুরসহ সব জায়গা সংরক্ষণ করতে চাই, তেমনি বরিশালে স্টিল সাইলো নির্মাণের ও দাবি জানাই। অতএব সরকার সার্বিক দিক বিবেচনা করবে বলে আমি আশা রাখি।
বরিশাল ২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, এ এলাকার প্রতিটি জায়গা মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের স্মৃতি বিজরিত। এখানে এসে আমরা ১৪ ডিসেম্বর, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। এ জায়গা সংরক্ষণ করার দাবি সবার।
বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকায় শহীদ এডিসি কাজী আজিজুল ইসলাম সড়কের বধ্যভূমি সংলগ্ন দিঘি ভরাট করে সেখানে সাইলো নির্মাণের প্রস্তুতি নেয় খাদ্য বিভাগ। এজন্য বধ্যভূমি সংলগ্ন দিঘিটি ভরাট কার্যক্রম গত বছরের শেষ দিকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এতে বধ্যভূমি ও এর আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য ও ইতিহাস-ঐতিহ্য বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় সুধিসমাজ দিঘি ভরাটের বিরোধীতা করেন। যে কারণে সাইলো নির্মাণ কার্যক্রম স্থগিত রাখে সংশ্লিষ্টরা।
এসব বিষয়ে সমাধানের জন্য খাদ্য মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম রোববার বরিশাল সফরে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
আরএ