কক্সবাজার: চিহ্নিত মানবপাচারকারীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। বিপরীতে প্রতিরোধকারীরা গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন।
বুধবার দুপুরে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে এ অভিযোগ আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, কক্সবাজার মানবপাচারের জন্য আলোচিত সমালোচিত একটি স্থান। এখানে মানবপাচার ভয়াবহ রূপ নেয় তখন ২০১৪ সালে। ওই বছর সচেতন একদল যুবক এগিয়ে আসেন মানবপাচার প্রতিরোধে। এসব যুবক গঠন করেন মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটি নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ সংগঠন তখন থেকে মানবপাচারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, প্রচারপত্র বিলি, সচেতনতা তৈরি, ভিকটিমদের উদ্ধারে পুলিশকে সহায়তা করে আসছে। একই সঙ্গে চিহ্নিত দালালদের গ্রেফতার ও সংবাদ মাধ্যমে তাদের নাম প্রকাশ করতে তথ্যও দিয়ে আসছে।
এর প্রেক্ষিতে তখন থেকে মানবপাচারকারীরা এ কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা হয়রানি, হুমকি, মামলা দায়ের শুরু করেছে। এর মধ্যে চিহ্নিত মানবপাচারকারীরা ইতিমধ্যে কমিটির আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের মাধ্যমে হয়রানি করছে। তার মধ্যে সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে সিরিজ মামলা শুরু করেছে মানবপাচারকারী চক্রের গডফাদার রেবি ম্যাডাম খ্যাত রেজিয়া বেগম।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, নারী নির্যাতন মামলা, ছেলেকে হামলার অভিযোগে মামলা, মানহানি মামলা দায়েরের পাশাপাশি আবদুল হামিদকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। এর মধ্যে একটি জামিন গ্রহণ, অপরটি মিথ্যা বলে আদালতে প্রমাণিত হলেও নারী নির্যাতন মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন আবদুল হামিদ।
তিনি জানান, আদালতে দায়ের করা মামলাটি পুলিশি তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে। তিনি বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনরঃতদন্তের নামে এক পক্ষের সাক্ষীর ভিত্তিতে এটি সত্য বলে আবার আদালতে উল্টো প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এতে গ্রেফতারি পরোয়ারা জারি হলে আবদুল হামিদ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। অথচ ডজন মামলার আসামি চিহ্নিত মানব পাচারকারীরা এখন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে। এতে মানবপাচার প্রতিরোধে আগ্রহ হারাবে। এতে মানব পাচার করতে দালালরা প্রতিবন্ধকতায় পড়বে না।
তিনি আবদুল হামিদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এলাকায় ফিরে চিহ্নিত মানব পাচারকারীরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে। এসব চিহ্নিত লোকজন নতুন করে মানবপাচারের চেষ্টার পাশাপাশি মানব পাচারের বিরুদ্ধে কথা বলায় লোকজনকে হয়রানি করছে। বিশেষ করে শীতের এ মৌসুমে তারা নতুন করে মানবপাচারের চেষ্টা করছেন।
সংবাদ সম্মেলন প্রতিরোধ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান রুবেল অভিযোগ করেছেন, উখিয়ার পুলিশ কর্মকর্তারা চিহ্নিত মানব পাচারকারীদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। থানায় বসে প্রকাশ্যে আড্ডাও দিচ্ছে। ইতিমধ্যে টেকনাফ থেকে কয়েকজন ভিকটিম উদ্ধারে নতুন করে মানব পাচারের চেষ্টার লক্ষণ দেখা গেছে। এ অবস্থায় প্রতিরোধ করতে সহায়তাকারীদের নিরাপত্তা জরুরি হয়ে উঠেছে। মানব পাচারকারীরা চেষ্টা করছে প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের হয়রানি করে ব্যস্ত রেখে এ সুযোগে ভয়াবহ এবং ঘৃণিত মানবপাচারের কাজটি শুরু করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
টিটি/এআর/টিসি