‘ঢেঁকিঘর!’ হ্যাঁ, এটাই নাম দিলেন এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। কুমিল্লার বার্ড’র নীলাচল টিলার ওপরে অগ্রবর্তী টিম বাংলানিউজের বাড়িটা যেভাবে সাজিয়ে নিয়েছিলো তাতে একদিকে ছিলো একটি ঢেঁকিঘর।
গোটা পরিবার যখন নীলাচলে পৌঁছায় তখন বেলা ৯টা। কি মনোরম নীলাচলে রঙিন প্যান্ডেলে ছোটছোট ঘর বসেছে। ওদিকে রসুই ঘরে ততক্ষণে পিঠের আয়োজন সম্পন্ন। ছাঁচের পিঠেরা কাঁচির খোঁচায় উঠছে। পাশে তৈরি হচ্ছে তেলেপিঠা। অনেকেই দ্রুত ছুটলেন রসুই ঘরের দিকে। রঙিন ঝালরে ঘেরা মুল ঘরেও আয়োজনে লেগে গেলো কয়েকজন। এখান থেকেই সমন্বয় করা হবে গোটা বনভোজন।
এরই মধ্যে কয়েকজন এগিয়ে গেলো ঢেঁকিঘর’র দিকে। যদিও ঢেঁকিঘর নামটি এডিটর ইন চিফ দিয়েছিলেন আরও পরে। বলছিলেন, ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গেলেও ধান ভানে তেমনি বাংলানিউজের কর্মীরা নীলাচলেও নিউজ লেখে। আর যে ঘরে বসে সে কাজ হচ্ছে সেটিকে ‘ঢেঁকিঘর’ বলাই চলে!
কর্মীদের জন্য এ যে কতো বড় কমপ্লিমেন্ট তা বোঝা গেলো তাদের উৎসাহে। বাংলানিউজের কোটি পাঠককে একটু পরপরই দিয়ে যাচ্ছিলেন নিউজ আপডেট। কেউ সামান্যও বুঝতেও পারেনি, মঙ্গলবার বাংলানিউজের ঢাকার অফিস ছিলো পুরো তালাবদ্ধ। কেউ বুঝতে পারেনি, বাংলানিউজের পুরো টিম কাজ করছে রাজধানী থেকে অনেক দূরে কোনও এক টিলার ওপর যার নাম নীলাচল।
কীভাবে? সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে একটি তথ্য দিয়ে রাখা যায়, পদ্মাসেতু প্রকল্পে ব্যয় ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার একনেক নিয়েছে তা ব্রেক হয় বাংলানিউজের মাধ্যমে। আর সেটিই ছিলো দিনের প্রধান ঘটনা। বুধবার যে নিজামীর আপিলের চূড়ান্ত রায় সেটিও বাংলানিউজ সবার আগে পাঠককে জানিয়ে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার ট্যুর বাতিলের ঘটনা জানাতেও অন্য মিডিয়ার থেকে পিছিয়ে ছিলো না বাংলানিউজ। বিশ্ব ইজতেমায় যে ২৮টি বিশেষ ট্রেন চলবে তার নিউজ এবং দুদকের নিউজও যথা সময়ে নিশ্চিত করেন আদিত্য আরাফাত। আর মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নয়াপল্টনের জনসভা আর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের জনসভার প্রতিটি আপডেট যথা সময়ে জানা থেকে বঞ্চিত হতে হয়নি পাঠককে। ছবিগুলোও অনেকাংশেই যথাসময়ে প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে।
কিভাবে? সে প্রশ্নের উত্তর একটাই পরিকল্পনা। আর মূল কথা সময়ের সর্বোত্তম ও সবচেয়ে উপযোগী এই সংবাদ মাধ্যমের কিছু নিজস্ব গুণাবলীর কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।
অনলাইন পৃথিবীর সবচেয়ে হালকা সংবাদ মাধ্যম। আপনাকে মাথায় করে বয়ে নিয়ে যেতে হবে না। হাতে ছোট্ট একটি ব্যাগ, কিংবা একটি ব্যাকপ্যাক ক্যারি করলেই আপনি নিয়ে যেতে পারবেন আপনার অফিসটিকে। হতে পারে সে কোনও গহীন জঙ্গলে, দূর জলদেশে, কিংবা নীলাচলের মতো পাহাড়ের চূড়ায়।
শর্ত মোটেই একটা। ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি।
ধন্যবাদার্হ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কনসেপ্ট। আরও ধন্যবাদার্হ দেশের মোবাইল টেলিফোন কম্পানিগুলো। নীলাচলে দেশের সবগুলো মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক দারুণ কাজ করেছে। থ্রিজি সাপোর্ট ছিলো নিরবচ্ছিন্ন। সেটাই ছিলো কাজের কথা।
বাংলানিউজের টিমে গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেলের সবগুলো মোবাইল ফোনের নম্বর রাখা ছিলো আর সবগুলোতেই ছিলো দারুণ নেটওয়ার্ক সাপোর্ট।
তবে এ সব কিছু থাকলেই যে সবার আগে সব খবর দেওয়া যাবে, সংবাদ বিনোদনে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখা যাবে তা কিন্তু নয়। এ জন্য প্রয়োজন একটি নিখুঁত পরিকল্পনা। যা এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করে আগেই চূড়ান্ত করে নেয় বাংলানিউজ টিম। তবে পরিকল্পনা, বা প্রস্তুতি, সে তো ‘হাফ অব দ্য ব্যাটল’। বাকিটা কিন্তু মাঠের কাজ। যার জন্য প্রয়োজন একটি দক্ষ কর্মী বাহিনী। যা বাংলানিউজের রয়েছে, এবং সেটাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
ঢাকায় নিউজরুম অপারেশনে সমন্বয়ের কাজ করেন আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল, এসএম সালাহউদ্দিন, অশোকেশ রায়, এডিশনাল আউটপুট এডিটর রাইসুল ইসলাম, কিন্তু এই দিনে তারাই হয়ে ওঠেন মূল কর্মী। নিউজরুম এডিটর মনিরুজ্জামান, জনি সাহাকে সঙ্গে নিয়ে ঢেঁকিঘরে তাদেরই দেখা যাচ্ছিলো সচল সারাক্ষণ। টেলিফোনে, ই-মেইলে নিউজ নিচ্ছিলেন, দ্রুত লিখে তা পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন ওয়েব সেকশনের কাছে। ওই দলে দায়িত্বে ছিলেন বিভাগীয় প্রধান অমিয় দত্ত ভৌমিক, সঙ্গে ছিলেন সাঈদুর রহমান সজীব, অপূর্ব গোমেজ, রিংকু ভৌমিক ও আফসানা পারভীন। সবাইকে নির্বিঘ্ন আনন্দে মেতে উঠার সুযোগ দিয়ে এরা কয়েকজন দারুণ খাটুনি খেটেছেন। তাতেই সচল ছিলো নিউজরুম। যা একটি দিনের জন্য নাম পেয়েছিলো ‘ঢেঁকিঘর’।
গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেলের লাখ লাখ ব্যবহারকারী বাংলানিউজের এসএমএস নিউজ সার্ভিসের গ্রাহক। হলফ করে বলা যায় গোটা দিনে একটি খবরও বাংলানিউজ যথাসময়ে ব্রেক করতে ভুল করেনি। পিকনিকের আয়োজক টিমের সদস্য হয়েও এ কাজে সদা-সতর্ক হয়ে কাজ করেছেন সিনিয়র নিউজরুম এডিটর কালাম আজাদ বেগ। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় একটু পরপরই আপডেট করা হয়েছে এসব টেলকোর সঙ্গে চলমান আইভিআর সার্ভিসও।
খবরগুলো যথা সময়ে কিভাবে পাওয়া যাবে সে নিয়ে দারুণ সমন্বয় করছিলেন চিফ অব করেসপন্ডেন্টস সেরাজুল ইসলাম সিরাজ। পদ্মাসেতুর সিদ্ধান্ত ব্রেক করতে সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মফিজুল সাদিকের সেকি উদ্বেগ আর ব্যস্ততা! সোর্সের কাছে বার বার ফোন। সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মান্নান মারুফ ও স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট শামীম খানের তরফ থেকে ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র জনসভার খবরতো পৌঁছে যাচ্ছিলো মিনিটে মিনিটে। আদালতের সিদ্ধান্তের খবরও দ্রুততায় পেয়ে যান সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ইলিয়াস সরকার।
বিনোদন বিভাগের প্রধান জনি হক, স্পোর্টস বিভাগের মুশফিক পিয়ালও নিজেদের আনন্দ-বিনোদন-খেলাধুলায় অংশ গ্রহণের মাঝে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিউজগুলো আপলোড করিয়ে নিচ্ছিলেন যথাসময়ে।
তবে এ জন্য পূর্বপ্রস্তুতিটাও একটা বড় বিষয়। আর ঢেঁকিঘরকে প্রস্তুত করে রাখাটা খুব জরুরি। এ কাজটি করে রাখে বাংলানিউজের অগ্রবর্তী দল। অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর আসিফ আজিজের নেতৃত্বে সে টিমে সিনিয়র নিউজরুম এডিটর হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর মাহবুব আলম ও সৈয়দ ইফতেখার আলম সে কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আর দারুণভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন কুমিল্লা থেকে বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু। ফলে এটি যতই ‘ঢেঁকিঘর’ নাম পাক অনলাইনের জন্য প্রয়োজনীয় একটি নিউজরুমের সকল ফ্যসিলিটি নিয়েই প্রস্তুত হয়ে থাকে কাপড় ঘেরা এই বার্তাকক্ষ। টেবিল, চেয়ার, বিদ্যুতের সংযোগ আর একসঙ্গে অনেকগুলো কম্পিউটার ব্যবহার উপযোগী মাল্টিপ্লাগ।
ভ্রাম্যমাণ এই বার্তাকক্ষের ডকুমেন্টেশনে কাজ করেন নিউজরুম এডিটর শুভ্রনীল সাগর।
একটি ‘ঢেঁকিঘর’ থেকে মঙ্গলবারের বাংলানিউজ এভাবেই প্রকাশিত হয়। অনলাইন সাংবাদিকতায় এ এক নতুন বিপ্লব।
পুনশ্চঃ ‘ঢেঁকিঘর’ নামটি প্রথম উচ্চারণ করেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সাজেদা সুইটি। আর দ্রুতই তা শোনা যায় এডিটর ইন চিফের মুখে। ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, আর বাংলানিউজ নীলাচলে গিয়েও নিউজ লেখে।
বাংলাদেশ সময় ২৩৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
** অনলাইন সাংবাদিকতা, অপ্রতিরোধ্য গতি