ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

তারেকের সম্পদ ও অর্থের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৬
তারেকের সম্পদ ও অর্থের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

ঢাকা: বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘যাবতীয় সম্পদ ও বর্তমান আয়ের উৎস’ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
 
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সন্তান তারেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করলেও এই প্রথম অবৈধ সম্পদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটি।


 
কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে সম্প্রতি কমিশন এ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার বিকেলে দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রটি অনুসন্ধানের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত-২ শাখার উপ-পরিচালক মো. হারুনুর রশিদকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুদকের এ কর্মকর্তা তারেকের স্থাবর-অস্থাবরসহ সকল সম্পদ ও অর্থের অনুসন্ধান করবেন।
 
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 
দুদকের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে দেশে ও বিদেশে তারেক রহমানের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে কিছু সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্টধারীরও তথ্য নেবে দুদক। এগুলোর তথ্য চেয়ে শিগগিরই নথিপত্র চাইবে দুদক।
 
দুদকের কাছে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, বিদেশে তারেক রহমান বেশ কিছু ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন নামে এসব ক্রেডিট কার্ডের তথ্য নিতেও দুদক আন্তর্জাতিকভাবে আইনি সহায়তা নেবে। ইতিমধ্যে এ অনুসন্ধান কাজের একটি কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করেছে দুদক।
 
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, বর্তমানে জ্ঞাত কোনো আয় না থাকলেও বিদেশে তারেক রহমান বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। বিভিন্নজনের নামে তিনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন।
 
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুটি সরকার আমলে তারেক রহমান অবৈধভাবে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হন। গড়ে তোলেন রহমান নেভিগেশন, ড্যান্ডি ডাইং, রহমান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজসহ বেশকিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া তিনি নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করেন বিভিন্ন জনের নামে প্রতিষ্ঠিত শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে। এ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করে সম্প্রতি অভিযোগ এলে দুদকের বাছাই কমিটির সুপারিশে কমিশন বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।

সূত্রমতে, তারেক রহমানের সঙ্গে তার দুই ঘনিষ্ট বন্ধুর সম্পদও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। তবে অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের নাম এখনই প্রকাশ করতে চায়নি সূত্রটি।
 
সূত্র আরো জানায়, এর আগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা অর্থ পাচার মামলায় বিচার আদালত তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেয়। তবে একই মামলার আসামি তারেক রহমানের ব্যবসায়ী বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা জরিমানা করে। এ রায়ের পর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সেই সঙ্গে বিচার আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করে।
 
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় তারেক রহমান ও  গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। পরে সেটি বিশেষ মামলা (নং-১৭/২০১১) হিসেবে বিশেষ আদালতে বিচার হয়। ওই মামলায় তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর সিটি ব্যাংকের ক্যাপিটাল স্কয়ার শাখা (একাউন্ট নং-১৫৮০৫২, ম্যাক্সি সেভ একাউন্ট নং-০-১৫৮০৫২-০০৮, সিটি এক্সেস একাউন্ট নং-০-১৫৮০৫২-০১৬) ) থেকে  সাপ্লিমেন্টারি গোল ভিসা কার্ডের (নং-৪৫৬৮-৮১৭০-১০০৬-৪১২২) মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৯৮২.৪২ মার্কিন ডলার ব্যয় করার অভিযোগ আনা হয়। যা টঙ্গিতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে নির্মাণ কনস্ট্রাকশন লি:র মালিক খাজিজা ইসলামের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে নেয়া হয়েছে-মর্মে দুদক মামলায় উল্লেখ করে। এ অর্থ গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের মাধ্যমে তারেক রহমান সিঙ্গাপুর পাচার করেছেন মর্মে দুদকের চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। তবে শুনানি শেষে বিশেষ জজ আদালত-৩ এর তৎকালিন বিচারক মো. মোতাহার হোসেন ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে এ মামলার বিচার কার্যক্রম চলে। তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডন বসবাস করছেন।
 
এদিকে লন্ডনে বসবাসকারী তারেক রহমানের অনুসন্ধান কিভাবে দুদক করবে-জানতে চাইলে দুদকের একজন মহাপরিচালক বাংলানিউজকে জানান, যদি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাল ঠিকানা বিদেশ হয়ে থাকে সেই ঠিকানা জানা থাকলে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তার রেকর্ডপত্র চাওয়া হবে। তাতে সাড়া পাওয়া না গেলে দেশে অবস্থানকালে ব্যবহৃত সর্বশেষ ঠিকানায় যোগাযোগ করা হবে।
 
প্রসঙ্গত, বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে দুদকের সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। দুদককে সরকারের এজেন্ট এবং পক্ষপাতের অভিযোগও আনা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। তবে এসব বক্তব্যের সোজাসাফটা বিরোধিতাও করেছেন দুদকের প্রধান নির্বাহীরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৬
এডিএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।