ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

যানজটের প্রভাবে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে মানুষ

ফররুখ বাবু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৬
যানজটের প্রভাবে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে মানুষ ফাইল ফটো

ঢাকা: ইদানীং একটি অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় যে, নগরবাসীর মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। সামান্য সমস্যাতেই অস্বাভাবিক আচরণ করছেন তারা।

  হয়তো এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবে যানজট ও গণপরিবহণ দুর্ভোগকেই এর প্রথম কারণ হিসেবে দেখছেন মনোবিজ্ঞানীরা।

প্রতিনিয়ত দেখা যায়, বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা নগরবাসী একটি গণপরিবহণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। বাসে উঠতে গিয়ে কাকে কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছেন, কিংবা কে ব্যাথা পেল না পেল, কিছুই ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করছেন না তারা। প্রয়োজন শুধুই গাড়িতে ওঠা।

গাড়িতে উঠে দ্বিতীয় টার্গেট থাকে বাসের সিটে বসার। সেখানেও  লড়াই! বয়সে কে বড়, কিংবা কে শারীরিকভাবে দুর্বল বা অসুস্থ সেই দিকে খেয়াল থাকে না কারও।

একটা সিট ফাঁকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই থেকে তিন জন সিটে বসার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। কখন কখনও হয় বচসা, বচসা গড়ায় ধাক্কাধাক্কিতে। এজন্য অবশ্য কাউকেই দোষারোপ করা যাবে না। কারণ সবাই চেষ্টা করেন অল্প আয়াসে কর্মস্থলে পৌঁছাতে, আবার কাজ শেষে কিছুটা স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে।

যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে না পারলে বকুনি খেতে হয় অফিসে। বাতিল হয় গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপয়েন্টমেন্ট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মস্থলের বসরা যানজটকে অজুহাত হিসেবে মানতে চান না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ কবীর বলেন, ‘যানজট বা গণপরিবহনের দুর্ভোগ শুধু কর্মঘণ্টাই নয়, সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নিচ্ছে আত্মবিশ্বাসকেও। ’

একজন মানুষ যখন সময়মত কোথাও পৌঁছাতে পারেন না, তখন তিনি নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। আর নিজের উপর বিশ্বাস হারানো মানুষ অন্যকে বিশ্বাস করতে পারেন না, তিনি হারিয়ে ফেলেন মানবিক অনুভূতিকেও। যোগ করেন তিনি।

এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, যানজটের দুর্ভোগ নগরবাসীর জীবনী শক্তিকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এমন কী নাগরিকদের মানসিক সমস্যাকেও বাড়িয়ে তুলছে! মানুষের মধ্যে বাড়ছে হতাশা, কমছে ধৈর্য্য। প্রতিনিয়ত যানজটের কারণে নগরবাসীর সহনশীলতা কমছে। অল্পতেই রেগে গিয়ে দুর্ব্যবহার করছেন সহ-যাত্রীর সঙ্গে। মানুষের সহনশীলতা কমে আসার ফলে পারিবারিক কলহের মাত্রাও বেড়ে গেছে অনেকাংশে।

যানজটের প্রভাব বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে এমনটা জানালেন প্রকৌশলী শাইখ মোহাম্মদ হিমু। তিনি বলেন, আবহাওয়া, যানবাহনের উপর নির্ভর করে যানজটের মানসিক চাপ। আমি যখন এসি গাড়িতে থাকি তখন অসহ্য লাগে না যানজট। তবে যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ না করতে পারলে নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। তখন মনে হয় এই কাজ আবার শেষ করতে পারবো কি না। ’ যোগ করেন তিনি।
 
যানজটে মানসিক প্রভাব প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইনেস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথের সহকারী অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন বলেন, ‘যানজটের প্রভাবে প্রথমে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। তারপর উদ্বেগ ও বিষণ্নতা তৈরি হয়। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকলে ও গাড়ির অপেক্ষায় থাকলে মস্তিষ্কের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর দুশ্চিন্তায় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও হতে পারে’ বলে বাংলানিউজকে জানান তিনি।

এছাড়া নগরবাসীর পারিবারিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করছে যানজট ও গণপরিবহন দুর্ভোগ। এক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বসবাসের স্থান নির্ধারণ করতে হচ্ছে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাদের বাচ্চা স্কুলে যায়, সে সব কর্মজীবীরা বাচ্চাদের স্কুলের কাছে বাসা নিচ্ছেন। আর বাচ্চা না থাকলে কর্মজীবী স্ত্রীর কর্মক্ষেত্রের কাছে বাসা নেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। অথচ নিজেদের অফিসে পৌঁছাতে তাদের ঠেলতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টার যানজট। ফলে পরিবারে অল্পতেই লেগে যাচ্ছে খিটিমিটি। আর এই সমস্যার মূলে রয়েছে নগরীর যানজট।

একাধিক পেশাজীবীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যানজট এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হতে হয়। এমন কী কেউ কেউ নিত্যদিনের যানজটে পড়ে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থ হচ্ছেন বলেও জানান তারা।

এছাড়া প্রতিনিয়ত যানজটের কারণে অতিমাত্রায় শব্দ ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। অতিরিক্ত শব্দ দূষণের ফলে মানুষের আচরণ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে বাচ্চাদের উপর এই প্রভাব বেশি পড়ছে বলে জানান পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬
এফবি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।